সপ্তম শ্রেণীর ভূগোল ষষ্ঠ অধ্যায় শীলা ও মাটি প্রশ্ন উত্তর| class 7 6th chapter geography question answer|
1. শিলা কাকে বলে?
উত্তর - ভূত্বক যেসব উপাদান দ্বারা গঠিত তাতে সাধারণভাবে শিলা বলা হয়।
2) শিলা কয় প্রকার ও কি কি?
উত্তর - শিলা তিন প্রকার, যথা - আগ্নেয় শিলা, পাললিক শিলা ও রূপান্তরিত শিলা।
আগ্নে য় শিলা কাকে বলে? উদাহরন দাও?
উত্তর - ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা বাইরে বেরিয়ে বায়ুর শীতলতার সংস্পর্শে এসে জমাট বেঁধে যে কঠিন শিলার সৃষ্টি করে, আগ্নেয় শিলা বলে। যেমন - ব্যাসল্ট, গ্রানাইট প্রভৃতি।
3) পাললিক শিলা কাকে বলে? উদাহরন দাও?
উত্তর - আগ্নে য় শিলা বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম শিলা খন্ডে পরিণত হয়, পরবর্তী সময়ে সেগুলি নদী বায়ু হিমবাহ প্রভৃতি মাধ্যমের দ্বারা বাহিত কোন নিচু অঞ্চলে সঞ্চিত হলে যে শিলার সৃষ্টি করে, তাকে পাললিক শিলা বলে। যেমন - বেলে পাথর, কাদা পাথর, চুনা পাথর প্রভৃতি।
4) রূপান্তরিত শিলা কাকে বলে?
উত্তর - আগ্নে য় ও পাললিক শিলা ভূগর্ভের চাপ ও তাপের ফলে পরিবর্তিত হয়ে ভিন্ন সত্তা বিশিষ্ট যে শিলা গঠিত হয়, তাকে রূপান্তরিত শিলা বলে।
5) ভারতের তাজমহল কোন শিলা দ্বারা গঠিত?
উত্তর - রূপান্তরিত মার্বেল শিলা দ্বারা গঠিত।
6) কোন শিলা হালকা ও সহজে ভেঙে যায়?
উত্তর - পাললিক শিলা
7) খুব কঠিন ও ক্ষয় প্রতিরোধী শিলা কোন টি?
উত্তর - আগ্নে য় ও রূপান্তরিত শিলা খুব কঠিন ও ক্ষয় প্রতিরোধী।
8) শিলা থেকে কিভাবে মাটির সৃষ্টি হয়?
উত্তর - বিভিন্ন ধরনের শিলা গুলি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে যে চুর্ন বিচুর্ন পদার্থে পরিণত হয়, তাকে রিগোলিথ বলে। পরবর্তী কালে এই রেগো লিথের সাথে বিভিন্ন জৈব পদার্থ মিশ্রিত হলে তা ক্রমে মাটিতে পরিণত হয়।
9) মাটির উপাদান গুলি কি কি?
উত্তর - মাটির তিনটি প্রধান উপাদান হল - খনিজ উপাদান, গ্যাসীয় উপাদান ও তরল উপাদান।
10) মাটিতে কোন উপাদানের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি?
উত্তর - খনিজ উপাদান, প্রায় 50%।
11) মাটি সৃষ্টির নিয়ন্ত্রক গুলি কি কি?
উত্তর - মাটি সৃষ্টির প্রধান নিয়ন্ত্রক গুলি হল - জলবায়ু, জীব জগত, সময়, ভূপ্রকৃতি।
12) কোন ধরনের জলবায়ু অঞ্চলে মাটি সৃষ্টির হার দ্রুত?
উত্তর - উষ্ণ ও বৃষ্টিবহুল জলবায়ু অঞ্চলে
13) কোন মাটি র জলধারণ করার ক্ষমতা কম?
উত্তর - বেলে মাটির
14) কোন মাটিতে বালি ও কাদার ভাগ সমান?
উত্তর - দোআঁশ মাটিতে
15) সূক্ষ্ম দানা যুক্ত মৃত্তিকা কোন টি?
উত্তর - এঁটেল মাটি
16) কোন মাটিতে ফসল সবচে য়ে ভালো হয়?
উত্তর - দোআঁশ মাটিতে
1. পৃথিবীর উপরের কঠিন আবরণটি কী দিয়ে গঠিত?
উঃ । পৃথিবীর উপরের কঠিন আবরণটি শিলা দ্বারা গঠিত।
2. শিলা কাকে বলে?
উঃ। বিভিন্ন খনিজ পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌগিক পদার্থ হল শিলা।
3. শিলা কয়প্রকার ও কী কী?
উঃ। শিলা তিন প্রকার। যথা—আগ্নেয় শিলা, পাললিক শিলা ও রূপান্তরিত শিলা।
4. শিলা কীভাবে ভেঙে যায় ?
উঃ। নানা প্রাকৃতিক শক্তি যেমন সূর্যের তাপ, বৃষ্টির আঘাত, বাতাসের ধাক্কা বা নদীর স্রোতের দ্বারা শিলা ভাঙে।
5. মাটি কয়প্রকার ও কী কী ?
উঃ। মাটি তিন প্রকার। যথা- বেলেমাটি, এঁটেল মাটি ও দোআঁশ মাটি ।
6. রেললাইনে পড়ে থাকা পাথর কী ধরনের শিলা ?
উঃ। রেললাইনে পড়ে থাকা পাথর আগ্নেয় শিলা।
7. খাবার নুন, খাবার সোডা, বিট নুন, পেনসিলের শিস, ফিটকিরি এই জিনিসগুলো আসলে কী ?
উঃ। এগুলি এক একটি খনিজ পদার্থ।
৪. কোন্ শিলা সবচেয়ে বেশি ক্ষয় প্রতিরোধ করতে পারে?
উঃ। রূপান্তরিত শিলা সবচেয়ে বেশি ক্ষয় প্রতিরোধ করতে পারে।
9. কোন্ কোন্ শিলা দিয়ে বাড়িঘর তৈরি হয়?
উঃ। ঘরবাড়ি তৈরি করতে বেলেপাথর ও কাদাপাথর লাগে।
10. কোন্ মাটি ফসল ফলানোর জন্য বেশ ভালো ?
উঃ। দোআঁশ মাটি ফসল ফলানোর জন্য বেশ ভালো।
11. শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে কীসে পরিণত হয়?
উঃ। শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মাটিতে পরিণত হয়।
12. কোন্ মাটিতে জল দাঁড়ায় না?
উঃ। বেলেমাটিতে জল দাঁড়ায় না।
13. প্রতিমা গড়তে কোন্ মাটি লাগে?
উঃ । প্রতিমা গড়তে এঁটেল মাটি লাগে।
14. চুনাপাথর কোথায় ব্যবহার করা হয়?
উঃ । চুনাপাথর সিমেন্ট তৈরি ও ইস্পাত কারখানায় ব্যবহার করা হয়।
15. মার্বেল কোন্ জাতীয় শিলা?
উঃ। মার্বেল রূপান্তরিত শিলা।
16. কোন্ শিলা পৃথিবীতে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হয়েছে ?
উঃ। আগ্নেয় শিলা।
প্রশ্নের মান -2/3
1. আগ্নেয় শিলা কীভাবে তৈরি হয়েছে? কয়েকটি আগ্নেয় শিলার নাম লেখো।
উঃ। জন্মের সময় পৃথিবী ছিল একটি আগুনের গোলা। পরে ধীরে ধীরে ঠান্ডা ও শক্ত হয়ে তৈরি হয়েছে আগ্নেয় শিলা। গ্রানাইট ও ব্যাসল্ট হল আগ্নেয় শিলা।
2. আগ্নেয় শিলার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উঃ। আগ্নেয় শিলা খুবই কঠিন এবং সহজে ভাঙে না। আগ্নেয় শিলা ভূ-গর্ভ ও ভূ-পৃষ্ঠের চাপে অনেক সময় বদলে। গিয়ে রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয়।
3. পাললিক শিলা কীভাবে তৈরি হয়েছে?
উঃ। বহু বছর ধরে আগ্নেয় শিলা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপায়ে ক্ষয় হয়ে ছোটো ছোটো নুড়ি, কাঁকর ও বালিতে পরিণত হয়। পরে এগুলি আবার নদী বায়ুর দ্বারা বাহিত হয়ে সমুদ্রের নীচে পলি রূপে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়। বহু বছর পরে এগুলি শক্ত হয়ে পাললিক শিলার সৃষ্টি হয়।
4. কয়েকটি পাললিক শিলার নাম লেখো। এই শিলার বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী ?
উঃ। কয়েকটি পাললিক শিলা হল বেলেপাথর, কাদাপাথর ও চুনাপাথর। পাললিক শিলায় স্তরভাগ বেশি লক্ষ করা যায়। পাললিক শিলা নরম ও হালকা হয়। এই শিলা কোমল ও নরম তাই সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যায়। স্তরে স্তরে এই শিলা সঞ্চিত হয়।
5. রূপান্তরিত শিলা কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে?
উঃ। আগ্নেয় ও পাললিক শিলা প্রবল তাপ, চাপ ও রাসায়নিক প্রক্রিয়া প্রভৃতি বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ও ভূগর্ভের তাপে এবং ভূপৃষ্ঠের চাপে অনেক সময় বদলে যায় এবং রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয়।
6. রূপান্তরিত শিলার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উঃ। রূপান্তরিত শিলা খুবই কঠিন হয়। এই শিলা সহজে ভাঙে না। এই শিলার একটি উদাহরণ হল মার্বেল। বিশ্ববিখ্যাত সৌধ তাজমহল রূপান্তরিত শিলা মার্বেল দিয়ে তৈরি হয়েছে।
7. মাটিতে কী কী উপাদান থাকে ?
উঃ। খনিজ পদার্থ হল মাটির প্রধান উপাদান। মাটিতে শতকরা 25 শতাংশ বাতাস, 25 শতাংশ জল ও খনিজ পদার্থ থাকে 45 শতাংশ। বাকি 5 শতাংশের মধ্যে থাকে উদ্ভিদ ও প্রাণীর পচে যাওয়া দেহাংশ, অণু জীব এবং উদ্ভিদের পাতা ও শিকড়।
8. শিলা থেকে মাটি কীভাবে তৈরি হয় ?
উঃ। নানা প্রাকৃতিক শক্তি যেমন সূর্যের তাপ, বৃষ্টি, বাতাসের ধাক্কা বা নদীর স্রোতের দ্বারা শিলা ভাঙে। এই ভাঙা শিলার টুকরোগুলো সেখানে পড়ে থাকে বা দূরে চলে যায়। ক্রমাগত ক্ষয় হয়ে এই পাথরগুলো অবশেষে মাটিতে পরিণত হয়। তবে এগুলি কোনোটই একদিনে হয় না, মাটি তৈরি হতে বহু বছর সময় লেগে যায়।
9. পলিমাটি কত প্রকার হয়? এই মাটি কোথায় দেখা যায় ?
উঃ। পলিমাটি তিন ধরনের হয়। বেলে মাটি, এঁটেল মাটি ও দোআঁশ মাটি। পলিমাটি নদীর ধারে দেখা যায়। পলিমাটি হলেই যে উর্বর হবে তা নয়, নানা ধরনের মাটির নানা রকমের গুণ থাকে।
10. বেলে মাটির বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উঃ। বেলে মাটির দানা মোটা। এই মাটিতে জল দাঁড়ায় না। জল ঢাললে মাটি তাড়াতাড়ি টেনে নেয়। বেলে মাটিতে পুষ্টি কম থাকায় ফসল খুব ভালো হয় না।
11. এঁটেল মাটির বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উঃ। এঁটেল মাটির দানা সূক্ষ্ম। এই মাটিতে বেশি পরিমাণে জল দাঁড়ায়। কারণ এঁটেল মাটির দানার মধ্যে ফাঁক কম থাকে। এই মাটিতে ফসল ভালো ফলে না। ধান, গম হলেও ফলন কম হয়।
12. দোআঁশ মাটির বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো ।
উঃ। দোআঁশ মাটির দানা মাঝারি। এই মাটিতে জল ও অন্য উপাদান সঠিক মাত্রায় থাকে। তাই চাষবাসের জন্য দোআঁশ মাটিই সবচেয়ে ভালো। সবরকমের ফসলই দোআঁশ মাটিতে ভালো হয়ে থাকে।
13. রেগোলিথ কাকে বলে ?
উঃ। বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাচূর্ণ যখন ভূমির ওপর এক শিথিল স্তরের সৃষ্টি করে তখন তাকে রেগোলিথ বলা হয়।
14. জীবাশ্ম কাকে বলে ?
উঃ। জীবদেহ সমুদ্রগর্ভে পলির সাথে সাথে সঞ্চিত হয়ে পলির নীচে চাপা পড়ে যায়, কালক্রমে শিলা গঠনের সময় ওই জীবদেহ জমাট বেঁধে পাথরে পরিণত হয়। তখন শিলাস্তরে ওই জীবদেহের ছাপ থেকে যায়, একে জীবাশ্ম বলে। হিমালয় পর্বতে এরূপ জীবাশ্ম দেখা যায়।
15. শিলাচক্র কী?
উঃ। ভূগর্ভের অভ্যন্তরের ম্যাগমা ও লাভা বাইরে সজ্জিত হয়ে আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি হয়। এই শিলা বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সমুদ্রগর্ভে সঞ্চিত হয়। সেখানে পলির রাশি চাপে পড়ে পাললিক শিলায় পরিণত হয়। এই পাললিক শিলা ও আগ্নেয় শিলা পুনরায় শিলার চাপে, তাপে ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয়। এইভাবে ক্রমান্বয়ে শিলা একরূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তিত হয়। একে শিলাচক্র বলে।
প্রশ্নের মান -5
1. মাটি তৈরিতে যারা প্রধান ভূমিকা নেয় তাদের অবদান আলোচনা করো।
উঃ। শিলা: ভবিষ্যতে মাটি কেমন হবে তা শিলার প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে।
জলবায়ু : মাটি তৈরিতে এক বিশেষ ভূমিকা নেয় জলবায়ু। উয় ও বৃষ্টিবহুল জলবায়ুতে মাটি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়। আবার শীতল ও শুষ্ক অঞ্চলে মাটি তৈরি হতে সময় লাগে। তাই উয় ও আর্দ্র অঞ্চলে মাটির গভীরতা বেশি হয়।
ভূপ্রকৃতি : ভূমির প্রকৃতি মাটি তৈরিকে প্রভাবিত করে। ভূমির খাড়া ঢালে মাটি সেভাবে তৈরি হয় না। আবার ভূমির ঢাল যেখানে কম, সেখানে ধীরে ধীরে মাটির স্তর তৈরি হতে পারে।
জীবজগৎ : জীবিত ও মৃত উদ্ভিদ বা প্রাণীর অংশ মাটিতে খুব কমই থাকে। কিন্তু কেঁচো, পিঁপড়ে, ছুঁচো, সাপ প্রভৃতি প্রাণীরা মাটিকে আলগা করার ফলে জল ও বাতাস মাটিতে প্রবেশ করে। মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণী মাটিতে পুষ্টি জোগায়।
সময় : মাটি একদিনে তৈরি হয় না। হাজার হাজার বছর এমনকি লক্ষ লক্ষ বছরও লেগে যায় মাটি তৈরি হতে।
2. পাললিক শিলায় জীবাশ্ম দেখা যায় কেন?
উঃ। পাললিক শিলার মধ্যে জীবাশ্ম দেখা যায় কারণ — সমুদ্র বা হ্রদের তলায় যখন স্তরে স্তরে পলি জমা হয়ে পাললিক শিলার সৃষ্টি হয়, তখন তার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও মৃত প্রাণীর দেহও চাপা পড়ে এবং পলি জমাট বাঁধার সময় এগুলি ধীরে ধীরে প্রস্তরীভূত হয়ে যায়। পাথরে পরিণত হলেও শিলাস্তরের মধ্যে ওসব উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাকৃতির ছাপ পড়ে যায়। এজন্য পাললিক শিলার মধ্যে উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহের ছাপযুক্ত জীবাশ্ম দেখা যায়। যেহেতু পাললিক শিলার গঠন প্রক্রিয়া দীর্ঘকাল ধরে চলে তাই সুদূর অতীতে বিভিন্ন সময়ে আবির্ভূত বহু প্রাণীদেহের ছাপ এই পাললিক শিলাস্তরের জীবাশ্মের মাধ্যমে পাওয়া যায়, যা প্রাচীনকালের উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ তথা জলবায়ু সম্পর্কে আমাদের জানতে সাহায্য করে।
No comments:
Post a Comment