সপ্তম শ্রেণীর ভূগোল পঞ্চম অধ্যায় নদী প্রশ্ন উত্তর| class 7 5th chapter geography question answer|
উত্তর - নদীর মোহনা
উত্তর - পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে অবস্থিত বঙ্গোপসাগর গঙ্গা নদীর মোহনা।
উত্তর - নীলনদ
উত্তর - আমাজন
উত্তর - ইয়াংসি কিয়াং
উত্তর - মিসিসিপি
উত্তর - ভলগা নদী
উত্তর - মারে ডার্লিং
উত্তর - ছোট ছোট অসংখ্য জলধারার মিলনের ফলে একটি বড়ো নদীর সৃষ্টি হয়। মূলত পার্বত্য অঞ্চলের যে অংশে বরফ গলা বা বৃষ্টির জল দ্বারা সৃষ্ট এই সব ছোট ছোট নদী গুলি প্রবাহিত হয়ে পর্বতের পাদদেশে এসে একত্রে মিলিত হয়, সেই পার্বত্য অংশ কে নদীর ধারণ অববাহিকা বলে।
উত্তর - পার্বত্য অঞ্চলের যে উঁচু ভূভাগ বা পর্বতের চূড়া দুটি ধারণ অববাহিকা কে পৃথক করে, তাকে জল বিভাজিকা বলে।
উত্তর - উঁচু স্থান উৎপন্ন হয়ে কোনো ছোট নদী যখন কোন একটি বড়ো নদীতে এসে মিলিত হয়, তখন সেই ছোট নদীটিকে বড়ো নদীর উপনদী বলা হয়। যেমন - যমুনা, গণ্ডক গঙ্গা নদীর উপনদী।
উত্তর - মূল বা বড়ো নদী থেকে কোন নদী উৎপন্ন হয়ে যখন বাইরের দিকে প্রবাহিত হয়ে অন্য কোথাও গিয়ে মেশে তাকে মূল নদীর শাখা নদী বলে। যেমন - ভাগীরথী হুগলি হল গঙ্গা নদীর শাখা নদী।
উত্তর - প্রধান নদী তার উপনদী, শাখা নদী নিয়ে যে অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তাকে উক্ত নদীর অববাহিকা বলা হয়।
উত্তর - উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নদী যে খাতের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়, তাকে নদীর উপত্যকা বলে। নদী উপত্যকার আকৃতি ইংরেজি 'I' বা 'V' আকৃতির হয়ে থাকে।
উত্তর - যে সব নদী কোন দেশের মধ্যে উৎপন্ন হয়ে সেই দেশের মধ্যেই কোন বড়ো হ্রদ বা জলাশয়ে গিয়ে মেশে তাকে অন্তর্বাহিনী নদী বলে। এই সব নদী সমুদ্রে পতিত হয় না। যেমন - ভারতের লুনি নদী একটি অন্তর্বাহিনী নদী।
উত্তর - যে সব নদী একাধিক দেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়, তাকে আন্তর্জাতিক নদী বলে। যেমন - গঙ্গা নদী, ব্রহ্মপুত্র নদী।
উত্তর - উঁচু পার্বত্য অঞ্চলের বরফ গলা জলে পুষ্ট যে সব নদীতে সারা বছর জল থাকে, তাকে নিত্য বহ নদী বলে। যেমন - ভারতের গঙ্গা, সিন্ধু, তিস্তা প্রভৃতি।
উত্তর - যে সব নদীতে সারা বছর জল থাকে না, তাদের অনিত্যবহ নদী বলে। সাধারণত মালভূমি অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের দরুন যে সব নদীর সৃষ্টি হয় সেগুলি তে বর্ষা কাল ব্যতীত অন্য সময় জল প্রবাহ থাকে না বলে, এই নদী গুলিকে অনিত্য বহ নদী বলা হয়।
উত্তর - নদী তার সুদীর্ঘ গতিপথে ক্ষয় কাজ, বহন কাজ ও সঞ্চয় কাজ করে থাকে।
উত্তর - নীল রং
উত্তর - কালো রং
উত্তর - উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত একটি বড়ো নদীর সমগ্র গতিপথ কে নদীর ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয় কার্যের তারতম্য অনুসারে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়, যথা - নদীর উচ্চ প্রবাহ, মধ্য প্রবাহ ও নিম্ন প্রবাহ।
উত্তর - উৎস থেকে সমভূমিতে নামার আগের অংশ কে নদীর উচ্চ প্রবাহ বলে।
উত্তর - উচ্চ প্রবাহে নদী পার্বত্য অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে ভূমির ঢাল বেশি, তাই এই অংশে নদীর ক্ষয় কাজের প্রাধান্য দেখা যায়।
উত্তর - গঙ্গা নদীর উচ্চ প্রবাহ গঙ্গা নদীর উৎস স্থল গোমুখ গুহা থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত বিস্তৃত।
উত্তর - পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির ঢাল বেশি হওয়ায় নদীর নিম্ন ক্ষয় বেশি হয়, তাই নদীর উচ্চ প্রবাহে নদী উপত্যকা গুলি খুব গভীর ও খাড়া ইংরেজি 'I' ও 'V' আকৃতির মতো দেখতে হয়, এগুলিকে গিরিখাত বলে।
উত্তর - ক্যানিয়ন
উত্তর - পার্বত্য অঞ্চলে নদীর গতিপথে কঠিন ও নরম শিলা পরস্পরের সমান্তরালে অনুভূমিক ভাবে অবস্থান করলে, নরম শিলা দ্রুত ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে নিচু হয়ে যায় কিন্তু কঠিন শিলা তেমন ক্ষয় প্রাপ্ত হয় না বলে উঁচু হয়ে থাকে। তখন নদী কঠিন শিলা থেকে নরম শিলার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে জলপ্রপাতের সৃষ্টি করে।
উত্তর - হরিদ্বার থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের মিঠি পুর পর্যন্ত গঙ্গা নদীর মধ্য প্রবাহ বিস্তৃত।
উত্তর - এই পর্যায়ে নদী প্রধানত বহন ও সঞ্চয় কাজ করে থাকে।
উত্তর - নদী বাঁক ও নদী মধ্যবর্তী দ্বীপ বা চর।
উত্তর - নদীর মধ্য ও নিম্ন প্রবাহে ভূমির ঢাল খুব কম থাকায় নদী ধীর গতিতে এঁকে বেঁকে প্রবাহিত হয় অর্থাৎ নদীতে বাঁকের সৃষ্টি হয়। এর পর কোন কারণ বশত নদীতে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে, নদী তার বাঁকা পথ ছেড়ে সোজা পথে চলতে শুরু করে। তখন নদী বাঁকের অবশিষ্ট অংশ ঘোড়ার খুরের মতে বিচ্ছিন্ন হ্রদের আকারে অবস্থান করে, একে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ।
উত্তর - সঞ্চয় কাজ
1. নদীর উৎস কাকে বলে?
উঃ। নদী যেখানে সৃষ্টি হয়, সেই জায়গাকেই নদীর উৎস বলে।
2. নদীর জল প্রবাহের পরিমাণের একক কী?
উঃ। নদীর জল প্রবাহের পরিমাণের একক কিউসেক।
3. নদীর উপত্যকা কাকে বলে ?
উঃ। উৎস' থেকে ‘মোহানা' পর্যন্ত যে খাতের মধ্যে দিয়ে নদী প্রবাহিত হয় তাকে নদীর উপত্যকা বলে।
4. পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো বদ্বীপ কী?
উঃ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বদ্বীপ হল গঙ্গানদীর বদ্বীপ।
5. ‘দোয়াব’ কথার অর্থ কী?
উঃ । 'দো' মানে দুই ও ‘আব' মানে জল/নদী। দোয়াব অর্থাৎ দুই নদীর মধ্যবর্তী স্থান।
6. নদীর ক্ষমতা কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?
উঃ। নদী উপত্যকার ঢাল, শিলার প্রকৃতি, জলপ্রবাহের শক্তি, বাহিত বস্তুর আকার ও ওজনের ওপর নদীর ক্ষমতা নির্ভর করে।
7. কোথা থেকে গঙ্গার উৎপত্তি হয়েছে?
উঃ। গঙ্গোত্রী হিমবাহের 'গোমুখ থেকে ভারতের প্রধান নদী গঙ্গার উৎপত্তি হয়েছে।
8. গঙ্গা নদীর মোহানা কোথায়?
উঃ । পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে গঙ্গা নদীর মোহানা।
9. গঙ্গার প্রধান দুটি শাখানদী কী কী ?
উঃ। গঙ্গার প্রধান দুটি শাখানদী হল ভাগীরথী ও পদ্মা।
10. একাধিক দেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নদীকে কী বলে?
উঃ। একাধিক দেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নদীকে আন্তর্জাতিক নদী বলে।
11. আবদ্ধ শৈলশিরা কোন্ অংশে গঠিত হয়?
উঃ। আবদ্ধ শৈলশিরা নদীর পার্বত্য প্রবাহে গঠিত হয়।
12. পৃথিবীর বৃহত্তম নদী অববাহিকা কোনটি?
উঃ। আমাজন নদীর অববাহিকা পৃথিবীর বৃহত্তম অববাহিকা।
13. নদী কী?
উঃ। নদী হল স্বাভাবিক প্রবহমান জলধারা, যা অভিকর্ষের টানে ভূমির ঢাল অনুসারে উৎস থেকে মোহানার দিকে চলে।
14. গঙ্গা নদীর উচ্চপ্রবাহ কতদূর পর্যন্ত দেখা যায়?
উঃ। উত্তরাখণ্ডের গোমুখ থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত গঙ্গানদীর উচ্চ প্রবাহ দেখা যায়।
প্রশ্নের মান -2/3
1. আদর্শ নদী কাকে বলে ?
উঃ। যে নদীতে তিনটি গতি অর্থাৎ উচ্চগতি, মধ্যগতি, নিম্নগতি সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়, তাকেই আদর্শ নদী বলে।
যেমন—গঙ্গানদী। মনে রাখতে হবে সব নদীতে ‘উচ্চ' 'মধ্য' ও 'নিম্ন' এই তিনটি প্রবাহ দেখা যায় না।
2. নদীর সৃষ্টি হয় কীভাবে?
উঃ। পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন দিক থেকে প্রবাহিত ছোটো ছোটো জলাধারগুলো যখন পরস্পর মিলিত হয়ে অনুসারে উঁচু থেকে নীচু স্থানের দিকে বয়ে চলে তখনই নদীর সৃষ্টি হয়।
3. উপনদী কাকে বলে?
উঃ। মূল নদীতে যে সমস্ত ছোটো জলধারা এসে পড়ে তাদের উপনদী বলে। যমুনা, গোমতী, ঘর্ঘরা, কোশী, গণ্ডক প্রভৃতি নদীগুলি গঙ্গার উপনদী।
4. শাখানদী কাকে বলে ?
উঃ। মূল নদী থেকে যে সমস্ত নদী শাখার মতো বেরিয়ে গিয়ে অন্য উপনদী কোথাও মেশে তাদেরকে শাখানদী বলে। ভাগীরথী-হুগলি হল গঙ্গার প্রধান শাখানদী ।
5. নদী অববাহিকা কাকে বলে ?
উঃ। নদী তার উপনদী, শাখানদী সহ উৎস থেকে মোহানা পর্যন্ত যে অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় সেই বিস্তীর্ণ ভূমিভাগকে নদী অববাহিকা বলে।
6. মোহানা কাকে বলে ?
উঃ। নদী যেখানে গিয়ে শেষ হয় অর্থাৎ কোনো সাগর, উপসাগর, হ্রদ, জলাশয় বা অন্য কোনো নদীতে গিয়ে মেশে, সেই জায়গাকেই নদীর মোহানা বলে।
7. ধারণ অববাহিকা কাকে বলে?
উঃ। পর্বতের বরফগলা জল বা বৃষ্টির জল অসংখ্য ছোটো জলধারার মাধ্যমে বয়ে গিয়ে বড়ো নদী তৈরি হয়। এই জলধারাসহ মূল নদীটি যে বিরাট অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় সেই অঞ্চলটিকে ওই নদীর ধারণ অববাহিকা বলা হয়।
৪. জলবিভাজিকা কাকে বলে ?
উঃ। কোনো পাহাড়ের চূড়ার অংশটি বৃষ্টির জলকে বিভিন্ন দিকে ভাগ করে বা বিভাজন করে, তাই তাকে জলবিভাজিকা বলে। জলবিভাজিকার বিভিন্ন দিকে বয়ে যাওয়া জল একাধিক ছোটো ছোটো জলধারার মাধ্যমে বয়ে গিয়ে, মিলিত হয়ে মূল নদী তৈরি করে।
9. উচ্চগতিতে নদী উপত্যকা 'V' আকৃতির হয় কেন?
উঃ। উচ্চগতিতে নদীর স্রোতের সঙ্গে নানা ছোটো-বড়ো পাথর নদীর তলায় ধাক্কা দিয়ে ক্ষয় করে। এই ক্ষয়ের ফলে নদী উপত্যকা চওড়া না-হয়ে গভীর হয়। এই গভীর নদী উপত্যকা ইংরেজি 'V' আকৃতির দেখতে হয়।
10. সব নদী মোহনায় ব-দ্বীপ সৃষ্টি করতে পারেনা কেন ?
উঃ। নিম্নগতিতে নদীর সঞ্চয়কাজ বেশি হয়। নদীর দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত পলি, কাদা, নুড়ি, বালি ইত্যাদি বয়ে এসে মোহানায় সজ্জিত হয়ে ব-দ্বীপ গঠন করে। অনেক নদীতে নিম্নগতি দেখা যায় না বা নদী দ্বারা বাহিত শিলাখণ্ডের পরিমাণও খুব বেশি হয় না। নদীতে জলের স্রোত খুব বেশি থাকলেও নদীর মোহানায় ব-দ্বীপ গঠিত হয় না। এই কারণেই পৃথিবীর বৃহত্তম নদী আমাজনের কোনো ব-দ্বীপ নেই।
11. অন্তর্বাহিনী নদী ও আন্তর্জাতিক নদী কাকে বলে?
উঃ। যে নদী কোনো দেশের মধ্যে উৎপন্ন হয়ে সেই দেশের মধ্যেই কোনো হ্রদ বা জলাশয়ে গিয়ে মেশে তাকে অন্তর্বাহিনী নদী বলে। ভারতের লুনি, রাশিয়ার আমুদরিয়া অর্ন্তবাহিনী নদী। যেসব নদী একাধিক দেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয় তাদের আন্তর্জাতিক নদী বলে। যেমন— সিন্ধু, ব্রষ্মপুত্র, ইউরোপের রাইন, দানিয়ুব প্রভৃতি আন্তর্জাতিক নদী ।
12. গিরিখাত (Gorge) ও ক্যানিয়ন (Cannyon) কাকে বলে?
উঃ। পার্বত্য অঞ্চলে নদীর উপত্যকা খুব সরু ও গভীর হলে 'I' বা 'V' আকৃতির মতো দেখতে হলে তাকে গিরিখাত বলে। যেমন পরুর এল ক্যানন দ্য কলরম। বৃষ্টিহীন পার্বত্য অঞ্চলে ও শুষ্ক অঞ্চলে এরকম সুগভীর গিরিখাতকে ক্যানিয়ন বলা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলরাডো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন।
13. খাঁড়ি কী?
উঃ। কিছু নদীর মোহানায় জোয়ারের সময় সমুদ্রের নোনা জল মোহানার ভেতর দিয়ে ওপরের দিকে উঠে যায়। আবার ভাটার সময় সমুদ্রে জল নেমে আসে। এভাবে চওড়া মোহানা বা খাঁড়ির সৃষ্টি হয়। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলের প্রচুর নদীতে এরকম খাঁড়ি দেখা যায়।
14. জলপ্রপাত (জলপ্রপাত) কিভাবে গতিপথ হয়?
উঃ। নদীর গতিপথে কঠিন ও নরম শিলা আনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে নদী নরম পাথরকে বেশি ক্ষয় করে, তাই শক্ত ও নরম পাথরের মধ্যে ধাপের সৃষ্টি হয়। তখন নদী শক্ত পাথরের উপর থেকে নীচে পাথরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। একে জলপ্রপাত বলে।
15. ব-দ্বীপ (Delta) কীভাবে সৃষ্টি হয়?
উঃ। নদীর মোহনার কাছে নদীর বহন করে আনা পলি, বালি, কাঁকর জমা হয়ে চড়া সৃষ্টি হয়। নদীর স্রোত তখন ভাগ হয়ে চড়ার দুদিক দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। এর ফলে প্রায় ত্রিভুজের মতো বা বাংলার মাত্রাহীন 'ব' অক্ষরের মতো যে বিস্তীর্ণ সমতল ভূভাগ বা দ্বীপ সৃষ্টি হয় তাকেই ব-দ্বীপ বলে। যেমন গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের মিলিত ব-দ্বীপ সমভূমি।
16. অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ কাকে বলে?
উঃ। নদীতে বাঁকের পরিমাণ বাড়লে বা নদীতে জল বাড়লে কখনো-কখনো নদী বাঁকের একটা অংশ মূল নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই বিচ্ছিন্ন হওয়া অংশটি ঘোড়ার খুরের মতো দেখতে হয়। এরূপ হ্রদকে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলা হয়।
17. মিয়েডার কাকে বলে?
উঃ। নদীর মধ্যপ্রবাহে বেগ কমে যাওয়ার ফলে নদী ধীর গতিতে চলতে থাকে। এই অবস্থায় সামান্য বাধা এলে নদী আঁকাবাঁকা পথ সৃষ্টি করে চলতে থাকে। একে মিয়েন্ডার বা নদী বাঁক বলে।
18. নিত্যবহ নদী কাদের বলে?
উঃ। যে সব নদী উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে সৃষ্টি হয় তার জলের উৎস বেশির ভাগই বরফ গলা জল। এই নদীগুলিতে সারা বছর জল থাকে বলে এদের নিত্যবহ নদী বলে। যেমনঃ গঙ্গানদী।
19. অনিত্যবহ নদী কাদের বলে?
উঃ। মালভূমি বা অন্য কোনো কম উঁচু জায়গায় সৃষ্টি হওয়া নদীগুলির জলের উৎস বৃষ্টির জল। এই কারণে বর্ষাকাল ছাড়া এই নদীগুলিতে সারা বছর জল থাকে না। তাই এই নদীগুলিকে অনিত্যবহ নদী বলে। যেমনঃ ময়ূরাক্ষী নদী।
20. কীভাবে নদী জলচক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে?
উঃ। বৃষ্টির জল নদীর মধ্য দিয়ে সাগরে গিয়ে পড়ে। সেই সাগরের জল বাষ্পীভূত হয়ে আবার বৃষ্টিরূপে নদীতে ফিরে আসে। এভাবেই নদী জলচক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে।
21. পৃথিবীর সব জায়গায় কি নদীর কাজ ও তিনটি প্রবাহ দেখা যায় ?
উঃ। পৃথিবীর মোট স্থলভাগের ৬০ শতাংশ স্থানে কম বেশি নদীর কাজ দেখা যায়। সব নদীতেই উচ্চ, মধ্য ও নিম্নপ্রবাহ এই তিনটি প্রবাহ দেখা যায় না।
22. নদী কখন প্লাবনভূমি সৃষ্টি করে?
উঃ। নিম্নপ্রবাহে নদীর মধ্যে পলি, বালি, কাকর জমে নদী অগভীর হয়ে যায়, ফলে বর্ষার অতিরিক্ত জল দুকুল ছাপিয়ে। বন্যার সৃষ্টি হয় এবং বন্যার সময় নদী তার দুধারে বিস্তীর্ণ জমিতে পলি সঞ্চিত করে এবং উর্বর প্লাবনভূমি সৃষ্টি করে। চীনের হোয়াংহো নদীর নিম্নগতিতে এরূপ প্লাবনভূমি দেখা যায়।
প্রশ্নের মান -5
1. নদীর কাজগুলি বর্ণনা করো।
উঃ। নদী মূলত বয়ে যাওয়া জলধারা। সে তার চলার পথে ক্ষয়কাজ, বহনকাজ ও সঞ্চয়কাজ—এই তিন রকমের কাজ করে। নদীর এই তিন প্রকার কাজ নির্ভর করে নদীর শক্তির ওপর। ক্ষয়কাজ—নদী তার জলস্রোতের ধাক্কায় মাটি, বালি, ছোটো বড়ো নুড়ি, এমনকি বড়ো পাথর সবই চূর্ণ করে ভাসিয়ে নিয়ে চলে। এটাই নদীর ক্ষয়কাজ বহনকাজ চূর্ণ করা এইসব নুড়ি, কাঁকর, বালি, পলি সবই নদীর স্রোতের সঙ্গে উঁচু থেকে নীচু অঞ্চলের দিকে বয়ে চলে। এটাই নদীর বহনকাজ।
সঞ্চয়কাজ—নদীর স্রোত কমে গেলে এইসব বহন করা পদার্থগুলি নদীর পাশে বা নদীর মধ্যে জমা হতে থাকে। এটাই নদীর সয়কাজ।
2. নদীর উচ্চপ্রবাহ কাকে বলে? এই প্রবাহে নদী কী কী কাজ করে?
উঃ। কোনো নদী যখন তার উৎস থেকে পার্বত্য অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্রবেগে প্রবাহিত হয় তখন নদীর ওই গতিকে উচ্চপ্রবাহ বলে। উৎস থেকে সমতলভূমিতে নামার আগে পর্যন্ত নদীর উচ্চপ্রবাহ। ভারতের প্রধান নদী গঙ্গার উচ্চপ্রবাহ গঙ্গোত্রীর গোমুখ থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির ঢাল ও বন্ধুরভাব বেশি হওয়ার জন্য নদীর শক্তি বেশি থাকে।
ফলে এই প্রবাহে নদীর প্রধান কাজ ক্ষয়। নদীর স্রোতের সঙ্গে ছোটো বড়ো পাথরগুলি নদীর তলায় ধাক্কা দিয়ে ক্ষয় করে। ফলে নদীর উপত্যকা গভীর হয়। এই সরু ও গভীর নদী উপত্যকা দেখতে হয় ইংরেজি I ও V অক্ষরের মতো। একে গিরিখাত বলে। নদীর গতিপথে নদী নরম পাথরকে বেশি ক্ষয় করে। ফলে শক্ত ও নরম পাথরের মধ্যে ধাপের সৃষ্টি হয়, আর নদী উপর থেকে নীচে ঝাঁপিয়ে পড়ে জলপ্রপাত সৃষ্টি করে।
3. নদীর মধ্যপ্রবাহ কাকে বলে? এই প্রবাহে নদীর কাজগুলি লেখো।
উঃ। পার্বত্য অঞ্চল ছেড়ে নদী যখন সমভূমির ওপর দিয়ে বয়ে যায় তখন নদীর গতিকে মধ্যপ্রবাহ বলা হয়। মালভূমি বা সমভূমি অঞ্চলে নদীর মধ্যপ্রবাহ দেখা যায়। হরিদ্বার থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুরশিদাবাদের মিঠিপুর পর্যন্ত গঙ্গানদীর মধ্যপ্রবাহ। মধ্যপ্রবাহে ভূমির ঢাল কম থাকায় নদীর গতি এবং শক্তি দুই-ই কমে যায়। এসময় নদী প্রধানত বহন ও সময়কাজ করে।
এসময় নদীর নীচের দিকে ক্ষয় না হওয়ার ফলে নদীর গভীরতা কমে এবং প্রচুর উপনদীর মাধ্যমে জলের পরিমাণ বাড়ে। নদী খুবই আঁকাবাঁকা পথে প্রবাহিত হয়ে মিয়েন্ডার সৃষ্টি করে। বয়ে আনা পলি, বালি, নুড়ি, কাঁকর নদীর দুধারে বা মাঝে সজ্জিত হয়। নদীতে চড়া পড়ে কখনও নদী-দ্বীপ তৈরি হয়। নদীতে কাঁকরের পরিমাণ বা জল বাড়লে বাঁকের একটা অংশ মূল নদী থেকে আলাদা হয়ে যায়। এই আলাদা অংশটি দেখতে ঘোড়ার খুরের মতো হয় একে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে।
4. নদীর নিম্নপ্রবাহ কাকে বলে? এই প্রবাহে নদীর কাজগুলি লেখো।
উঃ। নদী যখন সাগরের কাছাকাছি সমভূমিতে প্রবাহিত হয়ে মোহনা অঞ্চলে এসে পড়ে তখন তার যে প্রবাহ দেখা যায় তাকে নদীর নিম্নগতি বা নিম্নপ্রবাহ বলে। উচ্চ ও মধ্যপ্রবাহের পর অত্যন্ত মৃদু ভূমিঢালের ওপর দিয়ে নদী মোহানা পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। এটিই নদীর নিম্ন প্রবাহ। মুরশিদাবাদের মিঠিপুরের পর থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহানা পর্যন্ত গঙ্গানদীর নিম্নপ্রবাহ।
এই সময় নদীর গতি এবং শক্তি একেবারেই কমে যায়। তখন সামান্য বহন কাজ হলেও নদীর মূল কাজ হয় সঞ্চয়। এই প্রবাহে নদী শাখানদী সৃষ্টি করে। নদীর মধ্যে পলি, বালি, কাঁকর জমে অগভীর নদী বর্ষায় দুকূল ছাপিয়ে যায়। নদীর দু'ধারের বিস্তীর্ণ জমিতে পলি সঞ্চয় করে নদী প্লাবনভূমি সৃষ্টি করে। মোহানার কাছে নদীর চড়া সৃষ্টি হয়। নদীর স্রোত তখন ভাগ হয়ে চড়ার দু'দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ত্রিভুজের মতো ব-দ্বীপ সৃষ্টি করে।
5. ‘নদীর স্বাভাবিক ছন্দ মানুষই নষ্ট করেছে—আলোচনা করো।
উঃ। মানুষের জীবনের সঙ্গে নদীর সম্পর্ক নিবিড় হলেও মানুষের কিছু কিছু কাজ নদীর স্বাভাবিক ছন্দকে নষ্ট করে চলেছে। মানুষের কৃষি ব্যবস্থার প্রসার, শিল্পায়ন, নগরায়ন প্রভৃতি নানাভাবে নদীকে প্রভাবিত করেছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য নদীর ওপর কৃত্রিম বাঁধ তৈরি করে মানুষ সাময়িক সুফল পেলেও শেষপর্যন্ত তা আরও ভয়াবহ বন্যার কারণ হয়ে উঠেছে। একদিকে কৃষিজমি থেকে ধুয়ে আসা পলিতে নদী ক্রমশ ভরাট হচ্ছে অন্যদিকে সেচের জলের জোগান দিয়ে নদী ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে। শহর ও শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য জল নদীতে মিশে গিয়ে নদীর জল ক্রমশ বিষাক্ত হয়ে উঠছে।
6. আমাদের জীবনে নদীর প্রভাব কতখানি তা বুঝিয়ে লেখো ?
উঃ। নদীমাতৃক এই দেশের নদীগুলি আসলে আমাদের জীবনকথা। এই নদীগুলি শুধু ভূগোল বা ইতিহাস নয়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে নানাভাবে এরা জড়িয়ে আছে। মানুষের প্রাচীনতম সভ্যতা, মিশরীয় সভ্যতা, সুমেরীয় সভ্যতা প্রভৃতি গড়ে উঠেছিল কোনো-না-কোনো নদীর ধারে। বর্তমানে আমাদের দেশের গঙ্গা, পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্রের যে বিশাল সমভূমি, চিনের হোয়াংহো ও ইয়াং-সিকিয়াং নদীর উপত্যকা সবই পৃথিবীর জনবহুল অঞ্চল। তাই বলা যায় নদী শুধু সভ্যতার জন্ম দেয় না, তাকে পালনও করে।
No comments:
Post a Comment