ঔপনিবেশিক কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা অষ্টম শ্রেনীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়|class 8 3rd chapter history questions answers|
- ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কর্নওয়ালিশের আমলে ভারতে প্রথম রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প শুরু হয়। (সত্য/মিথ্যা নির্বাচন করো)
Ans. মিথ্যা
- বাংলায় জমিদারি ব্যবস্থা কে প্রবর্তন করেন? (এক কথায় উত্তর দাও)
Ans. বাংলায় জমিদারি ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন কর্নওয়ালিস।
- কত খ্রিস্টাব্দে বাংলার নীলবিদ্রোহ ঘটেছিল? (এক কথায় উত্তর দাও)
Ans. ১৮৫৯-৬০ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় নীলবিদ্রোহ ঘটেছিল।
- কীভাবে টেলিগ্রাফে রেল স্টেশনগুলির মধ্যে যোগাযোগ করা হত? (এক কথায় উত্তর দাও)
Ans. টেলিগ্রাফের মাধ্যমে রেল স্টেশনগুলির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা হত, কারণ টেলিগ্রাফের মধ্যে দিয়ে রেলের সিগন্যাল ব্যবস্থা কার্যকর করা যেত।
- _______ খ্রিস্টাব্দে ভারতে মাত্র কয়েক মাইল জুড়ে টেলিগ্রাফ যোগাযোগ চালু হয়। (শূন্যস্থান পূরন করো)
Ans. 1851
- সূর্যাস্ত আইন কোন্ ভূমি ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত? (এক কথায় উত্তর দাও)
Ans. সূর্যাস্ত আইন চিরস্থায়ী ভূমিব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত।
- আবওয়াব কী? (এক কথায় উত্তর দাও)
Ans. চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দ্বারা কৃষকদের কাছ থেকে আবওয়াব বা বেআইনি কর আদায় করা হত।
- দাক্ষিণাত্যে তুলো চাষের সঙ্গে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের বিষয় জড়িত হয়েছিল। (সত্য/মিথ্যা নির্বাচন করো)
Ans. সত্য
- অর্থনীতির আধুনিকীকরণ কী? (এক কথায় উত্তর দাও)
Ans. রেলপথ বানানো, রফতানির হার বাড়ানো ও কৃষিতে বাণিজ্যিকীকরণের প্রক্রিয়াকে একসঙ্গে অর্থনীতির আধুনিকীকরণ’ বলা হয়।
- রেলপথের বিস্তারের মাধ্যমে দেশীয় পণ্যে ভারতের বাজার ছেয়ে গিয়েছিল। (সত্য/মিথ্যা নির্বাচন করো)
Ans. মিথ্যা
- ব্যাংক থেকে ধারে পাওয়া অথবা ব্যাংকের সুদের হারের ক্ষেত্রে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হত। (সত্য/মিথ্যা নির্বাচন করো)
Ans. সত্য
- এলফিনস্টোন মহলওয়ারি বন্দোবস্ত প্রচলন করেন। (সত্য/মিথ্যা নির্বাচন করো)
Ans. সত্য
- দশসালা বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন বেন্টিঙ্ক। (সত্য/মিথ্যা নির্বাচন করো)
Ans. মিথ্যা
- ‘আসামের চা বাগানগুলির ওপর ইউরোপীয় মালিকদের অত্যাচারের খবর’ কোন পত্রিকাতে প্রকাশ হয়? (এক কথায় উত্তর দাও)
Ans. সঞ্জীবনী পত্রিকাতে আসামের চা বাগানগুলির ওপর ইউরোপীয় মালিকদের অত্যাচারের খবর প্রকাশিত হয়।
- দশসালা বন্দোবস্তের পরিবর্তিত রূপ হল চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। (সত্য/মিথ্যা নির্বাচন করো)
Ans. সত্য
- এলফিনস্টোন মহলওয়ারি বন্দোবস্ত প্রচলন করেন। (সত্য/মিথ্যা নির্বাচন করো)
Ans. সত্য
- ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হয় । (সত্য/মিথ্যা নির্বাচন করো)
Ans. মিথ্যা
- রেলপথের বিস্তারের মাধ্যমে দেশীয় পণ্যে ভারতের বাজার ছেয়ে গিয়েছিল। (সত্য/মিথ্যা নির্বাচন করো)
Ans. মিথ্যা
- দশসালা বন্দোবস্তের পরিবর্তিত রূপ হল চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। (সত্য/মিথ্যা নির্বাচন করো)
Ans. সত্য
- দাদন বলতে বোঝায় _______ (অগ্রিম অর্থ/আবওয়াব/ বেগার শ্রম)। (শূন্যস্থান পূরন করো)
Ans. অগ্রিম অর্থ
- দাক্ষিণাত্যে তুলো চাষের সঙ্গে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের বিষয় জড়িত হয়েছিল। (সত্য/মিথ্যা নির্বাচন করো)
Ans. সত্য
- বাংলায় জমিদারি ব্যবস্থা কে প্রবর্তন করেন? (এক কথায় উত্তর দাও)
Ans. বাংলায় জমিদারি ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন কর্নওয়ালিস।
- ‘আসামের চা বাগানগুলির ওপর ইউরোপীয় মালিকদের অত্যাচারের খবর’ কোন পত্রিকাতে প্রকাশ হয়? (এক কথায় উত্তর দাও)
Ans. সঞ্জীবনী পত্রিকাতে আসামের চা বাগানগুলির ওপর ইউরোপীয় মালিকদের অত্যাচারের খবর প্রকাশিত হয়।
- রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় সরকার সরাসরি কৃষকদের সঙ্গে চুক্তি করত। (সত্য/মিথ্যা নির্বাচন করো)
Ans. সত্য
- চা ও কফি বাগিচা শস্য। (সত্য/মিথ্যা নির্বাচন করো)
Ans. সত্য
- মহলওয়ারি বন্দোবস্ত হয়েছিল দেশীয় গ্রামগুলির সঙ্গে ইংরেজ সরকারের। (সত্য/মিথ্যা নির্বাচন করো)
Ans. সত্য
১. পাঁচশালা ব্যবস্থা কাকে বলে ?
উঃ । ৫ বছরের জন্য দেওয়া জমি বন্দোবস্তকে পাঁচশালা ব্যবস্থা বলা হয় ।
২. দর্শশালা ব্যবস্থা কী ?
উঃ । দশ বছরের জন্য দেওয়া জমি বন্দোবস্তুকে দশশালা বলা হয় । ১৭৯০ সালে এই ব্যবস্থা চালু হয় ।
৩. মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির কটি প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল ?
উঃ । দুটি প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল । গ্রীষ্মকালে ওটকামুন্দ ও শীতকালে মাদ্রাজ ।
8. কে নদীপথ জরিপ করেন ? তিনি কতগুলি মানচিত্র তৈরি করেন ?
উঃ । জেমস্ রেনেল নদীপথ জরিপ করেন । তিনি ১৬ টি মানচিত্র তৈরি করেন ।
৫. বাংলা প্রেসিডেন্সিকে এক সময়ে কী বলা হতো ?
উঃ । বাংলা প্রেসিডেন্সিকে এক সময় ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ প্রেসিডেন্সিও বলা হতো ।
৬. কবে কলকাতায় সুপ্রিম কোর্ট তৈরি হয় ?
উঃ । ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় সুপ্রিম কোর্ট তৈরি হয় ।
৭. সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কে ছিলেন ?
উঃ । সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন স্যার এলিজা ইম্পে ।
৮. কাউন্সিল অভ এডুকেশন কবে তৈরি হয় ?
উঃ । ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে কাউন্সিল অভ এডুকেশন তৈরি হয় ।
৯. চার্লস উড কে ছিলেন ?
উঃ । চার্লস উড ছিলেন বোর্ড অভ কন্ট্রোলের সভাপতি ।
১০. কোম্পানি কবে বাংলার শাসনভার গ্রহণ করেন ?
উঃ । ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি দ্বৈত শাসনব্যবস্থা তুলে দিয়ে সরাসরি বাংলার শাসনভার গ্রহণ করেন ।
১১. কে , কবে ইজারাদারি ব্যবস্থা চালু করেন ?
উঃ । ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ইজারাদারি ব্যবস্থা চালু করেন ।
১২. কে , কবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন ?
উঃ । লর্ড কর্নওয়ালিস ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন ।
১৩. কৰে ফোর্ট উইলিয়াম তৈরি হয় ?
উঃ । ফোর্ট উইলিয়াম ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হয় ।
১৪. কে , কবে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন ?
উঃ । উইলিয়াম জোনস , ১৭৮৪ সালে কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন ।
১৫. কে , কার নেতৃত্বে ঠগি দমনের জন্য বিশেষ বিভাগ তৈরি করেন ?
উঃ । লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক কর্নেল স্লিম্যানের নেতৃত্বে ঠগি দমনের জন্য এক বিশেষ বিভাগ তৈরি করেন ।
১৬. কত সালে দারোগা ব্যবস্থার বিলোপ করা হয় ?
উঃ । ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে পাকাপাকিভাবে দারোগা ব্যবস্থার বিলোপ করা হয় ।
১৭. কে কবে বেনারসে হিন্দু কলেজের প্রতিষ্ঠা করেন ?
উঃ । ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে জোনাথন ডানকান বেনারসে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন ।
১৮. কার নেতৃত্বে এবং কবে কলকাতায় সংস্কৃত কলেজের পঠন পাঠন শুরু হয় ?
উঃ । পণ্ডিত হেম্যান হোরাস উইলসন - এর নেতৃত্বে ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় সংস্কৃত কলেজে পঠন পাঠন শুরু হয় ।
১৯. কবে কলকাতায় হিন্দু কলেজ তৈরি হয় ?
উঃ । ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় হিন্দু কলেজ তৈরি হয় ।
২০. নারীশিক্ষার বিস্তারে কে কোন স্কুল তৈরি করেন ?
উঃ । নারীশিক্ষার বিস্তারের জন্য বীটন সাহেব ( বেথুন ) বেথুন স্কুল তৈরি করেন ।
২১. কে , কৰে কলকাতায় এসে মিশনারি স্কুল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন ?
উঃ । ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে স্কটিশ মিশনারি সোসাইটির সদস্য আলেকজান্ডার ডাফ কলকাতায় এসে মিশনারি স্কুল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন ।
২২. বোম্বাই প্রেসিডেন্সির মূল গোড়াপত্তন কোথায় হয়েছিল ?
উঃ । সুরাটে ।
২৩. রাজ রামমোহন কোন কলেজের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন ?
উঃ । রাজা রামমোহন রায় হিন্দু কলেজের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ।
২৪. ভারতে ইংরেজি শিক্ষা প্রসারে কার ভূমিকা প্রধান ছিল ?
উঃ । লর্ড ব্যাবিংটন মেকলের ভূমিকা প্রধান ছিল ।
২৫. কলকাতা মাদ্রাসা কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ?
উঃ । ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় ।
৩। অতি সংক্ষেপে উত্তর দাও (৩০-৪০টি শব্দ):
ক) ব্রিটিশ প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থা কাকে বলে?
উত্তর: ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল একটি বণিক সংস্থা। ভারতীয় উপমহাদেশে বাণিজ্যের স্বার্থে তারা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু কতগুলি ঘাঁটি তৈরি করেছিল। এই ঘাঁটিগুলির মধ্যে ছিল মাদ্রাজ, বোম্বাই ও কলকাতা। পরে এই তিনটি বাণিজ্যঘাঁটিকে কেন্দ্র করে যে ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, তাকে ব্রিটিশ প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থা বলা হয়।
খ) কোম্পানি-পরিচালিত আইন ব্যবস্থাকে সংহত করার ক্ষেত্রে লর্ড কর্ণওয়ালিস কী ভূমিকা নিয়েছিলেন?
উত্তর: ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ আইনগুলিকে সংহত করে কোর্ড বা বিধিবদ্ধ আইন চালু করেন। তার ফলে দেওয়ানী সংক্রান্ত বিচার ও রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব আলাদা করা হয়। জেলা থেকে সদর পর্যন্ত আদালত ব্যবস্থা কে ঢেলে সাজানো হয়। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতার আদালতে আবেদনের অধিকার স্বীকার করা হয়। তবে সমস্ত আদালতেই প্রধান বিচারপতি হতেন ইউরোপীয়রাই। লর্ড কর্নওয়ালিস এর বিচার ব্যবস্থার সংস্কার বাস্তবে ঔপনিবেশিক বিচার কাঠামো থেকে ভারতীয়দের পুরোপুরি বাদ দিয়েছিল।
গ) কোম্পানির সিপাহিবাহিনী বলতে কী বোঝো?
উত্তর: প্রাথমিকভাবে উপনিবেশিক শাসনের যে কোন বিরোধিতার মোকাবিলা করতো পুলিশ বাহিনী। তবে পরিস্থিতি গর্তর হয়ে উঠলে প্রয়োজন পড়তো সেনাবাহিনীর। উত্তর ভারতে কৃষকদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হতো। এমনকি সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা করে রাখা হতো। সেই প্রথা মেনেই তৈরি হয়েছিল কোম্পানির সেনাবাহিনী।
ঘ) কোম্পানি-শাসনে জরিপের ক্ষেত্রে জেমস রেনেল-এর কী ভূমিকা ছিল?
উত্তর: ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলার নদী পথগুলি জরিপ করেন জেমস রেনেল। ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি ভারতের সার্ভেয়ার জেনারেল বা জরিপ বিভাগের প্রধান হিসাবে তাকে নিয়োগ করে। বাংলায় নদীপথগুলি জরিপ করে রেনেল মোট ১৬টি মানচিত্র তৈরি করেছিলেন। সেই প্রথম রেনেলের তত্ত্বাবধানে বাংলার নদী গতিপথের মানচিত্র বানানো হয়। এর ফলস্বরূপ দেওয়ানি লাভের পর রাজস্ব আদায়ের জন্য জমি জরিপের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।
৪। নিজের ভাষায় লেখো (১২০-১৬০টি শব্দ):
ক) ওয়ারেন হেস্টিংস ও লর্ড কর্ণওয়ালিসের বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের তুলনামূলক আলোচনা করো। এ সংস্কারগুলির প্রভাব ভারতীয়দের উপর কীভাবে পড়েছিল?
উত্তর: ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ কোম্পানি নতুন বিচারব্যবস্থা চালু করে। ১৭৭৩ থেকে ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দেওয়ানি বিচারব্যবস্থার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে। একদিকে হেস্টিংস ১১ জন হিন্দু পণ্ডিতদের দ্বারা হিন্দু আইনগুলির সংকলন করিয়ে সেটির ইংরেজি অনুবাদ করেন।মুসলিম আইনগুলিরও সংকলন বানানো হয়। এর ফলে দেশীয় আইনের ব্যাখ্যার জন্য ইউরোপীয় বিচারকদের ভারতীয় সহকারীদের উপর নির্ভর করতে হতো না। এতে বিচারব্যবস্থা কেন্দ্রীভূত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়েছিল।
অপরদিকে, লর্ড কর্নওয়ালিশ আইনগুলিকে সংহত করে কোড বা বিধিবদ্ধ আইন চালু করেন। দেওয়ানি সংক্রান্ত বিচারব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়। দেওয়ানি বিচার ও রাজস্ব আদায়ের দায়িত্বকে আলাদা করা হয়। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আবেদনের অধিকার স্বীকার করে নেওয়া হয়। এই ব্যবস্থা ঔপনিবেশিক শাসনের প্রধান স্তম্ভ হয়ে উঠেছিল।
খ) ভারতে কোম্পানি-শাসনের বিস্তার ও সেনা বাহিনীর বৃদ্ধির মধ্যে কী সরাসরি সম্পর্ক ছিল বলে মনে হয়? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর: ভারতে কোম্পানি-শাসনের বিস্তার ও সেনা বাহিনীর বৃদ্ধির মধ্যে কী সরাসরি সম্পর্ক ছিল বলে মনে হয়।
☐ প্রাথমিকভাবে ঔপনিবেশিক শাসনের যেকোনো বিরোধিতার মোকাবিলা করত পুলিশবাহিনী। তবে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠলে প্রয়োজন পড়ত সেনাবাহিনীর। ফলে ভারতের উপনিবেশিক সাম্রাজ্যের ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সমানুপাতিকভাবে বেড়ে উঠেছিল কোম্পানির সেনাবাহিনী। গোড়া থেকেই স্থায়ী সেনাবাহিনী তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল কোম্পানি। সেক্ষেত্রে মুঘল সেনা নিয়োগের পরম্পরা অনুসরণ করেছিল ব্রিটিশরা। ফলে কোম্পানির হয়ে এলাকা দখলের কাজ করত। তার ফলে কোম্পানি এলাকা বৃদ্ধি করা সহজ হয়ে উঠত। সেনাবাহিনীতে সিপাহি নিয়োগের মাধ্যমে কোম্পানির রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ছড়িয়ে পড়েছিল। ঔপনিবেশিক শাসনের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হিসেবে সিপাহীবাহিনী ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
গ) ব্রিটিশ কোম্পানির প্রশাসন ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের ভূমিকা কী ছিল? কীভাবে আমলারা একটি সংকীর্ণ গোষ্ঠী হিসাবে এক্যবদ্ধ হয়েছিলো।
উত্তর: অসামরিক শাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক শাসনের প্রধান হাতিয়ার ছিল আমলাতন্ত্র। তবে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমলাদের কোনও স্বাধীনতা ছিল না। ইংরেজ সরকারের নীতিগুলি রূপায়ণ করাই ছিল তাদের কাজ।
১৮০০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। সিভিল সার্জন বা অসামরিক প্রশাসকেরা ওই কলেজের শিক্ষা পেতেন। তবে ব্রিটেনে কোম্পানির পরিচালকরা কলকাতায় প্রশিক্ষণের বদলে ব্রিটেনের প্রশিক্ষণকে উপযুক্ত বলে মনে করতেন। শেষ পর্যন্ত হেইলবেরি কলেজে প্রশিক্ষণের প্রক্রিয়াটি শুরু করা হয়। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সমস্ত প্রার্থীদেরকেই হেইলবেরি কলেজে যোগ দিতে হতো। একই কলেজে পড়ার ফলে সিভিল সার্ভেন্টের মধ্যে একটি ঐক্যবোধ তৈরি হয়েছিল। পাশাপাশি সিভিল সার্ভেন্টরা নিজেদের একটি আলাদা সংকীর্ণ গোষ্ঠী হিসেবে ভাবতে শুরু করে।
ঘ) কোম্পানি-শাসনের শিক্ষানীতির ক্ষেত্রে বাংলার সঙ্গে বোম্বাইয়ের কোনো তফাৎ ছিল কী? কোম্পানির শিক্ষানীতির প্রভাব ভারতীয় সমাজে কীভাবে পড়েছিল বলে তোমার মনে হয়?
উত্তর: কলকাতা ও বোম্বাই-এর শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে কিছুটা ফারাক ছিল। বাংলায় প্রথমে দেশীয় ভাষায় শিক্ষাদান পদ্ধতি চালু হলেও পরে শিক্ষার মাধ্যম হয় ইংরেজি। বোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে গোড়া থেকেই ভারতীয় ভাষার মাধ্যমে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় জোর পড়েছিল। উচ্চশিক্ষার মাধ্যম ইংরাজি হওয়ায় তা গণমুখী হয়নি। পাশাপাশি উপযুক্ত প্রশিক্ষণ বা হাতেকলমে শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় তা পৃথিগত চর্চার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং প্রচলিত ভারতীয় শিক্ষাচর্চা ক্রমশ অবলুপ্ত হতে থাকে।
ঙ) কোম্পানি-শাসনের সঙ্গে জমি জরিপের সম্পর্ক কী ছিল? ইজারাদারি বন্দোবস্ত চালু করা ও তা তুলে দেওয়ার পিছনে কী কী কারণ ছিল?
উত্তর: ভারতে ঔপনিবেশিক প্রশাসন রাজস্ব ব্যবস্থা বিষয়ে নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে ছিল। তার মধ্যে প্রধান ছিল জমি জরিপ করা ও তার ভিত্তিতে রাজস্ব নির্ধারণ করা। ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধের পর ও দেওয়ানির অধিকার পাওয়ার ফলে বাংলায় জমি জরিপ করে রাজস্ব নির্ণয় বিষয়ে কোম্পানি তৎপর হয়ে ওঠে।
☐ পাঁচ বছরের জন্য নিলাম ডেকে জমিদারি কোনও ব্যক্তির হাতে দেওয়া হয়। তাকে বলে ইজারাদারি ব্যবস্থা। কিন্তু দ্রুতই এই ব্যবস্থায় বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায়, এই ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়। কারণ —
(১) অনেক ইজারাদার গ্রাম সমাজের বাইরের লোক হওয়ায় ঠিক মতো রাজস্ব নির্ণয় করতে পারেনি। করের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি হওয়ায় সবাই রাজস্ব দিতেই পারেনি।
(২) অনেক ক্ষেত্রেই ধার্য করের অপেক্ষা আদায় বেশি হয়ে গিয়েছে। সেজন্য অনেক ইজারাদার রাজস্ব শোধ করতে ব্যর্থ হয়। ক্রমে ব্রিটিশ কোম্পানি এসব বন্দোবস্ত তুলে দেন।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :
১. মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির গোড়াপত্তন সম্পর্কে লেখো ।
উঃ । মসুলিপট্রনম ও সুরাটকে ঘাঁটি করে ব্রিটিশ কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যকলাপ চলে ১৬১৯ ও ১৬২২ খ্রিস্টাব্দে । ১৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি মাদ্রাজ একটি ঘাঁটি বানায় এবং মাদ্রাজপট্টনম গ্রামে সেন্ট জর্জ দুর্গ বানায় । ক্রমে সেন্ট জর্জ ও মাদ্রাজ কেন্দ্র করেই মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি বা সেন্ট জর্জ দুর্গ প্রেসিডেন্সি গড়ে ওঠে । দক্ষিণ ভারতের এক বিরাট অংশ এই প্রেসিডেন্সি অন্তর্গত ছিল । আজকের তামিলনাড়ু , কেরালা ও অন্ধ্রপ্রদেশের বেশ কিছু অঞ্চলের পাশাপাশি কর্ণটিক ও দক্ষিণ উড়িষ্যার বেশ কিছু অঞ্চল মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভূক্ত ছিল । এই প্রেসিডেন্সির গ্রীষ্মকালীন প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল ওটকামুন্দ ও শীতকালীন কেন্দ্র ছিল মাদ্রাজ ।
২. বাংলা প্রেসিডেন্সি কীভাবে গড়ে উঠেছিল ?
উঃ । ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি যখন বাংলা , বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি পায় , তখন থেকেই বাংলার ওপর কোম্পানির কর্তৃত্ব গড়ে উঠতে থাকে । ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ কোম্পানি নিজামতের অধিকার পায় । এইভাবে দেওয়ানি ও নিজামত এই দুই অধিকার পেয়ে বাংলায় ব্রিটিশ কোম্পানির অধিকার চূড়ান্ত হয় এবং বাংলাতেও প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থা গড়ে ওঠে । বাংলা , বিহার , উড়িষ্যা , আসাম ও ত্রিপুরা অঞ্চল মিলে ছিল বাংলা প্রেসিডেন্সি । পাঞ্জাব , উত্তর ও মধ্য ভারতের অঞ্চলগুলি এবং গঙ্গা - ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার অঞ্চলও বাংলা প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ছিল ।
৩. বোম্বাই প্রেসিডেন্সির গোড়াপত্তন কীভাবে হয়েছিল ?
উঃ । বোম্বাই প্রেসিডেন্সির মূল গোড়াপত্তন হয়েছিল সুরাটে ব্রিটিশ কোম্পানির ঘাঁটি বানানোকে কেন্দ্র করে । ধীরে ধীরে পশ্চিম ও মধ্যভারত এবং আরব সাগরের তীরবর্তী অঞ্চলগুলিকে নিয়ে বোম্বাই প্রেসিডেন্সি তৈরি হয় । সিন্ধু প্রদেশও এর অন্তর্গত ছিল । প্রথম দিকে এই প্রেসিডেন্সিটি পশ্চিম প্রেসিডেন্সি নামে পরিচিত ছিল । ক্রমে বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে সুরাটের অবনতি হতে থাকে পাশাপাশি বোম্বাই উন্নত হতে থাকে এবং ১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বোম্বাইকে ঘিরেই ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির কার্যকলাপ বিস্তৃত হতে থাকে ।
৪. ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারের বিবরণ দাও ।
উঃ । ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ভারতে ইংরেজি ভাষা নির্ভর পাশ্চাত্য শিক্ষার দ্রুত বিস্তার ঘটতে থাকে । ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে একটি প্রতিবেদনে বলা হয় প্রশাসন ইংরেজি শিক্ষার বিস্তারে জোর দেবে । তবে পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বছরে সরকারি অনুদান পাবে । ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষাজ্ঞানকে আবশ্যক বলে ঘোষণা করা হয় । এই নীতির পিছনে লর্ড মেকলের শিক্ষা সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ । ঊনবিংশ শতকের চারের ও পাঁচের দশকে ক্রমেই সরকারি উদ্যোগে শিক্ষাবিস্তার হতে থাকে । ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় কাউন্সিল অভ এডুকেশন । তৈরি হয় । ক্রমেই কাউন্সিল - নিয়ন্ত্রিত বিদ্যালয় ও তার ছাত্রসংখ্যা বাড়তে থাকে ।
৫. উডের ডেচপ্যাচ সম্বন্ধে কী জানো লেখো ।
উঃ । ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে বোর্ড অভ কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উডের নেতৃত্বে শিক্ষা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পেশ করা হয় । তাকে উডের প্রতিবেদন বলা হয় । উডের নেতৃত্বে শিক্ষার ব্যাপারে এক সুগঠিত শিক্ষা কাঠামো গড়ে তোলার কথা বলা হয় । এই কাঠামো হবে প্রাথমিক থেকে বিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত । ইংরেজি ও ভারতীয় দুই ভাষার চর্চার কথা বলা হয়েছে । ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে তিনটি প্রেসিডেন্সিতে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হয় । উচ্চ বিদ্যালয়ের সংখ্যাও বাড়ানো হয় ।
৬. উইলিয়াম কেরি কে ছিলেন ? শিক্ষাচর্চায় তাঁর অবদান লেখো ।
উঃ । ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পাশাপাশি শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশন স্থাপন করা হয় । উইলিয়াম কেরি ছিলেন শ্রীরামপুর মিশনারিদের মধ্যে সব থেকে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব । তিনি ভারতীয় মহাকাব্যগুলি ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেন । এছাড়া তিনি বাইবেলের একটি অংশকে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ করেন । ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে হালেদের লেখা ব্যাকরণ বিষয়ক বইটিকেও সম্পাদনা করে প্রকাশ । করেছিলেন উইলিয়াম কেরি ।
৭. মেকলের প্রতিবেদন বলতে কী বোঝ ?
উঃ । ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি , জেনারেল কমিটি অভ পাবলিক ইনস্ট্রাকশনের সভাপতি টমাস ব্যাবিংটন মেকলে ভারতবর্ষে শিক্ষার প্রসঙ্গে একটি প্রতিবেদন বা মিনিটস পেশ করেন । তাতে বলা হয় ভারতবর্ষে ইংরেজি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি করা ঔপনিবেশিকদের প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত । তাই যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভারতীয় ভাষায় শিক্ষার চর্চা করবে তারা কোনো সরকারি অনুদান পাবে না । বাস্তবে মেকলের ধারণা ছিল ব্রিটিশরাই জাতিগতভাবে উন্নত এবং তাদের হাত ধরেই ভারতে আধুনিকতা আসবে । তাই তিনি দেশীয় ভাষাচর্চাকে হেয় করেছিলেন ।
৮. ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে খ্রিস্টান মিশনারিদের ভূমিকা আলোচনা করো । উঃ । ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম কেরি শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশন তৈরি করেন । শ্রীরামপুরের মিশনারিয়া ব্রিটিশ কোম্পানির তরফে শিক্ষাবিস্তারের বিভিন্ন উদ্যোগে সামিল হন । নিজেদের মুদ্রনযন্ত্র বসিয়ে তাঁরা ছাপাখানা চালানোর কাজে ব্রতী হন এবং বাংলা ভাষায় বিভিন্ন লেখা ছাপাতে শুরু করেন । উইলিয়ম কেরি বাইবেলের একটি অংশকে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ করেন । 1 ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে স্কটিশ মিশনারি সোসাইটির সদস্য আলেকজান্ডার ডাফ কলকাতায় এসে অনেকগুলি মিশনারি স্কুল তৈরির উদ্যোগ নেন এবং ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রতিষ্ঠিত জেনারেল অ্যাসেম্বলি ইনস্টিটিউশন ছিল বিখ্যাত ।
৯. হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে কী জানা যায় ?
উঃ । সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার এডওয়ার্ড হাইড ইস্ট , ডেভিড হেয়ার , রাধাকান্ত দেব প্রমুখের উদ্যোগে ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় । এছাড়াও কলকাতা শহরের শিক্ষিত ও ধনী বেশ কিছু ব্যক্তিবর্গ হিন্দু কলেজ পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন । রাজা রামমোহন রায়ও হিন্দু কলেজের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । এই বিদ্যালয় খুব দ্রুতই খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছায় ।
১০. লর্ড কর্নওয়ালিশ আমলাতন্ত্রকে সংগঠিত করতে কী কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন ?
উঃ । অসামরিক শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক শাসনের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার ছিল আমলাতন্ত্র । আমলাতন্ত্রকে সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে লর্ড কর্নওয়ালিশ সিভিল সার্ভিস বা অসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করেন । ভারতের ব্রিটিশ প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করাই ছিল কর্নওয়ালিসের উদ্দেশ্য । তাঁর ধারণা ছিল উপযুক্ত বেতন না পাওয়ার ফলেই কোম্পানির কর্মচারীরা সততার সঙ্গে কাজ করে না । ফলে কর্নওয়ালিস আইন করে কোম্পানি প্রশাসনের আধিকারিকদের ব্যাক্তিগত ব্যবসা ও কোনোরকম উপহার নেওয়া বন্ধ করে দেন । পাশাপাশি চাকরির মেয়াদের ভিত্তিতে সিভিল সার্ভেন্টদের পদোন্নতির ব্যবস্থা চালু করেন এবং অবশ্যই কর্মচারীদের বেতনও বাড়িয়ে দেন ।
১১. পিট প্রণীত ভারত শাসন আইনে কী বলা হয়েছে ? -
উঃ । ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম পিট একটি নতুন আইন তৈরি করেন , একে বলা হয় পিটের ভারত শাসন আইন । এই আইন অনুসারে একটি বোর্ড অভ কন্ট্রোল তৈরি করা হয় । সেই বোর্ডকে কোম্পানির সামরিক ও অসামরিক শাসন ও রাজস্ব ব্যবস্থা পরিচালনার পুরো দায়িত্ব দেওয়া হয় । পাশাপাশি এই আইনে স্পষ্ট বলা হয়েছিল যে ভারতে কোম্পানির সমস্ত প্রশাসনিক কর্তাই গভর্নর জেনারেলের কর্তৃত্ব মেনে চলতে বাধ্য । এর ফলে ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির কার্যকলাপের উপর ব্রিটেনের পার্লামেন্ট নিশ্চিতভাবে নজরদারি করতে পারে ।
১২. রেগুলেটিং অ্যাক্টে কী কী বলা হয়েছে ?
উঃ । এই অ্যাক্ট অনুসারে মাদ্রাজ , বোম্বাই বাংলা প্রেসিডেন্সিতে তিনটির স্বতন্ত্র কার্যকলাপের উপর হস্তক্ষেপ করা হয় । ঠিক হয় বাংলার গভর্নরই হবেন গভর্নর জেনারেল । তাঁর অধীনে মাদ্রাজ ও বোম্বাইয়ের বাণিজ্যিক ঘাঁটিগুলির গভর্নরেরা থাকবেন । তাঁদের কার্যকালে মেয়াদ হবে ৫ বছর । চারজন সদস্য নিয়ে তৈরি হবে একটি গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিল । এই আইনের ফলে কলকাতা ভারতের ব্রিটিশ শাসনের রাজধানীতে পরিণত হয় ।
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর :
১. ওয়ারেন হেস্টিংস ভারতবর্ষে কীভাবে প্রাচ্য শিক্ষাচর্চার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ? উঃ । ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃত চর্চাকে বলে প্রাচ্যবাদ । ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির স্বার্থরক্ষার জন্য ওয়ারেন হেস্টিংস ভারতবর্ষে এক বিশেষ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থার উদ্যোগ নেন । তিনি বিশ্বাস করতেন ভারতবর্ষকে ভালোভাবে শাসন করতে হলে ভারত ও তার সংস্কৃতি সম্বন্ধে জ্ঞান থাকা জরুরি । সেই অনুযায়ী ফারসি ও ভারতীয় ভাষা জানা লোকেদের তিনি রাজস্ব দফতরের কাজে নিয়োগ করেছিলেন । কোম্পানীর কর্মচারীদের সুবিধার জন্য হেস্টিংস হিন্দু ও মুসলিম আইনগুলিকে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন । নাথানিয়েল ব্র্যাসি হালেদ হেস্টিংসের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি হিন্দু আইন সংকলন অনুবাদ করেন । এর নাম A Code of Gentoo Law , অপরদিকে কোম্পানির বিভিন্ন নিয়মনীতিগুলিকে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ করানো হয় । এলিজা ইম্পের তৈরি আইনগুলিরও ফারসি ও বাংলা অনুবাদ করা হয় ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে । এই অনুবাদ করেন জোনাথন ডানকান । হেস্টিংস বুঝেছিলেন ঔপনিবেশিক সমাজের জ্ঞানচর্চা ও চিন্তাভাবনার সঙ্গে সম্যক পরিচয় প্রশাসনের কাজে প্রয়োজন । এই সময় যে সমস্ত প্রাচ্যশিক্ষা ও ভাষাচর্চা কেন্দ্র । গড়ে ওঠে তার মূল উদ্দেশ্য ছিল এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষিত ব্যক্তিরা ঔপনিবেশিক শাসন ও বিচার ব্যবস্থাকে সুগঠিত করার কাজে সহায়ক হবেন । এই উদ্দেশ্যে ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস কলকাতা মাদ্রাসা তৈরি করে আরবি ও ফারসি ভাষাচর্চার উদ্যোগ নেন । ওয়ারেন হেস্টিংস বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃত পণ্ডিতদের কলকাতায় বিদ্যাচর্চার সুযোগ করে । দিয়েছিলেন । জোনাথন ডানকান ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে বেনারসে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন । ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম তো কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । জোনাথনের লক্ষ্য ছিল সংস্কৃত ভাষায় লেখা ভারতীয় সাহিত্যগুলির ইংরেজি অনুবাদ করা । তিনি মনে করতেন এর ফলে ভারতের শিক্ষিত মানুষদের সঙ্গে ব্রিটিশদের বোঝাপড়ার পথ আরও সুগম হবে । এর পর ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ এবং ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা সংস্কৃত কলেজ স্থাপিত হয় । প্রতিষ্ঠা করেন হেম্যান হোরাস উইলসন । তাছাড়া শ্রীরামপুর মিশনারি ও অন্যান্য ইউরোপীয় ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে প্রাঙা শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে ওঠে ও পাশাপাশি বই ছাপা শুরু হলে প্রাচ্য বিদ্যাচর্চা গতি লাভ ।
২. কর্নওয়ালিসের পুলিশ ব্যবস্থার বিবরণ দাও ।
উঃ । ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে জেলাগুলির দেখভাল করার জন্য লর্ড কর্নওয়ালিস পুলিশ থানা ব্যবস্থা চালু করেন । প্রতিটি থানার দায়িত্বে ছিলেন একজন দারোগা । দারোগাদের নিয়ন্ত্রণ করতেন ম্যাজিস্ট্রেটরা । স্থানীয় অঞ্চলে সাধারণ মানুষের কাছে দারোগাই ছিলেন কোম্পানি । শাসনের ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের প্রতীক । কিন্তু স্থানীয় জমিদারদের সঙ্গে দারোগারা সমঝোতা করে চলায় সাধারণ মানুষের উপর জমিদার ও দারোগার যৌথ পীড়ন চলত । ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে পাকাপাকিভাবে দারোগ্য ব্যবস্থার বিলোপ করা হয় , তার বদলে গ্রামের দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় একজন কালেক্টরকে । ব্রিটিশ কোম্পানির মূল লক্ষ্য ছিল পুলিশি ব্যবস্থার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা । সেই উদ্দেশ্যেই পুলিশ ব্যবস্থার নানারকম সংস্কার করা হতে থাকে । শেষ পর্যন্ত ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধুপ্রদেশ অঞ্চলে নতুন ধাঁচের পুলিশি ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয় । ক্রমে আলাদা পুলিশ আইন বানানো হয় এবং ধীরে ধীরে ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও তার প্রদর্শনের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল পুলিশি ব্যবস্থা ।
৩. ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনে জমি - জরিপ করে রাজস্ব নির্ণয় করার প্রক্রিয়াটি আলোচনা করো ।
উঃ । ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধের পর বাংলার নবাব মিরজাফরের থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলকাতা থেকে কুলপি পর্যন্ত ২৪ টি পরগনার জমিদারি পায় । সে সময় রবার্ট ক্লাইভ নতুন জমিদারি মাপজোক করার জন্য একদল জরিণবিদের খোঁজ করতে থাকেন । ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে ফ্র্যাঙ্কল্যান্ড নতুন ২৪ পরগনার জমি জরিপের কাজ শুরু করেন । কিন্তু কাজ শেষ হবার আগেই ফ্র্যাঙ্কল্যান্ড মারা যান এবং তাঁর অসমাপ্ত কাজ শেষ করে হগ্ ক্যামেরন । ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দের বক্সারের যুদ্ধের পর বাংলায় জমি জরিপ করে রাজস্ব নির্ণয় বিষয়ে কোম্পানি আরও তৎপর হয়ে ওঠে । ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে জেমস রেনেলকে ব্রিটিশ কোম্পানি ভারতের সার্ভেয়ার জেনারেল বা জরিপ বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করে । তিনি বাংলার নদীপথগুলি জরিপ করে মোট ১৬ টি মানচিত্র তৈরি করেন । ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে বোর্ড অভ রেভেনিউ রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয় দেখাশোনা করতে থাকে ।
8. ঔপনিবেশিক শাসনে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হয়েছিল কেন ? সেনাবাহিনীতে জাতিভিত্তিক মনোভাব ও অসন্তোষ কীভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল ?
উঃ । ঔপনিবেশিক শাসনে যে কোনো বিরোধিতার মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ঘোরতর হয়ে উঠলে প্রয়োজন গড়ত সেনাবাহিনীর । ফলে ভারতে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সমানুপাতিকভাবে বেড়ে উঠেছিল কোম্পানির সেনাবাহিনী । গোড়া থেকেই স্থায়ী সেনাবাহিনী তৈরির ক্ষেত্রে ব্রিটিশরা মুঘল সেনা নিয়োগের পরম্পরা অনুসরণ করেছিল । সেনাবাহিনীতে সিপাহি নিয়োগের মাধ্যমে কোম্পানির রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ছড়িয়ে পড়েছিল । কোম্পানির হয়ে এলাকা দখল করার পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সিপাহিদের প্রধান কাজ ছিল বিভিন্ন বিদ্রোহের মোকাবিলা করা । ঔপনিবেশিক শাসনের গোড়ার দিকে সেনাবাহিনীতে প্রচলিত জাতভিত্তিক ধারণাগুলির বিরোধিতা ব্রিটিশ কোম্পানি করেননি । ফলে সিপাহি বাহিনীতে উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ ও রাজপুত কৃষকরা সহজেই জায়গা করে নিয়েছিল । এইসব লোকেরা সিপাহিবাহিনীতে যোগ দিয়ে অনেক বেশি সুযোগ সুবিধা ও বেতন পেত ফলে সিপাহিবাহিনীতে জাতভিত্তিক মনোভাব দেখা দিতে শুরু করে । ১৮২০ খ্রিস্টাব্দ থেকে সিপাহিবাহিনীর কাঠামোর বেশকিছু বদল দেখা দিতে থাকে । মারাঠা , নেপালি , গুর্খা ও মহীশুর অঞ্চলের পাহাড়ি উপজাতিদের বাহিনীতে নিয়োগ করা শুরু হয় । ফলে উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ ও রাজপুত কৃষকদের সুযোগ সুবিধা কমতে থাকে তার জন্য সিপাহিবাহিনীতে একটা অসন্তোষ তৈরি হতে থাকে ।
No comments:
Post a Comment