ইতিহাসের ধারণা অষ্টম শ্রেনীর ইতিহাস প্রথম অধ্যায়|class 8 history 1st chapter questions answers|
১.“ভারতবর্ষের ইতিহাস নিশীথকালের একটা দুঃস্বপ্নকাহিনীমাত্র” – উক্তিটি কার?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
২. “বাঙালির ইতিহাস চাই” – কথাটি কে বলেছেন?
উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
জানার বিষয়
উনবিংশ শতকের গোড়ার দিক থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা, মালওয়া য়া প্রভৃতি অঞ্চল থেকে চীনে আফিম রপ্তানি করত। সেই আফিম রপ্তানি নিয়ে চীনের সঙ্গে ব্রিটেনের সংঘাত ও শেষের যুদ্ধ হয়েছিল।
৩. ‘আধুনিক’ শব্দটা এসেছে অধুনা থেকে।
৪. ভারতের ইতিহাসের কয়েকটি ভাগ ও কি কি?
উত্তর: ভারতের ইতিহাসকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা – প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক।
৫. পলাশীর যুদ্ধ কত খ্রিস্টাব্দে হয়েছিল?
উত্তর: পলাশীর যুদ্ধ হয়েছিল ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে।
৬. ‘রাজাবলি’ নামক ইতিহাস বইটি কার লেখা?
উত্তর: মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার।
৭. ‘History of British India’ – বইটি কার লেখা?
উত্তর: জেমস মিল।
৮. জেমস মিল ভারতের ইতিহাস কে কয়টি ভাগে ভাগ করেছেন ও কি কি?
উত্তর: জেমস মিল ভারতের ইতিহাসকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। সেগুলো হলো— হিন্দু যুগ, মুসলিম যুগ ও ব্রিটিশ যুগ।
৯. জেমস মিল কোন যুগকে ভারত-ইতিহাসে অন্ধকারময় যুগ বলেছেন?
উত্তর: জেমস মিল লিখেছেন, মুসলিম যুগ ভারত-ইতিহাসে অন্ধকারময় যুগ।
১০. চন্দ্রগুপ্ত কোন ধর্মাবলম্বী ছিলেন?
উত্তর: চন্দ্রগুপ্ত জৈন ধর্মবলম্বী ছিলেন।
১১. বিম্বিসার ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।
১২. ঔরঙ্গজেব কত সালে মারা যান?
উত্তর: ঔরঙ্গজেব মারা যান ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে।
১৩. পলাশীর যুদ্ধকে ফেলা হয় ভারত-ইতিহাসের আধুনিক পর্বে।
১৪. ভারতের আধুনিক ইতিহাসের উপাদানগুলি আলোচনা করো।
উত্তর: আধুনিক ইতিহাস লেখার উপাদান নানারকম। পৃথিবীজুড়েই আধুনিক সমাজ ইতিহাস লেখার উপাদানের বৈচিত্র অনেক বেশি। ভারত–ইতিহাসও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রশাসনিক কাগজপত্র, বই, ডায়েরি, চিঠি থেকে শুরু করে জমি বিক্রির দলিল বা রোজকার বাজারের ফর্দ। আবার ছবি, মানচিত্র, পোস্টার, বিজ্ঞাপন, সংবাদপত্র— সবই ইতিহাসের উপাদান।
১৫. ইতিহাসের উপাদান হিসেবে আত্মজীবনীর সীমাবদ্ধতা উল্লেখ কর।
উত্তর: আত্মজীবনী থেকে লেখকের সময়ের ইতিহাসের উপাদান পাওয়া যায়। কিন্তু সরাসরি সেই আত্মজীবনী ব্যবহার করলেই হবে না। কারণ, যিনি আত্মজীবনী লিখছেন, তিনি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচারধারা থেকেই সবকিছু ব্যাখ্যা করেছেন। ঐতিহাসিক যদি সেই ব্যাখ্যা পুরোপুরি মেনে নেন বিচার না করে, তাহলে একপেশে হয়ে যায় বক্তব্য। কখনো বা পুরো ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছে যেতে পারেন ঐতিহাসিক। যেমন, উইলিয়াম ওয়েডারবার্ন তার লেখা অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউমের জীবনীতে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব হিউমকেই দিয়েছেন। অথচ পরে দেখা গেছে যতটা কৃতিত্ব হিউমকে দেওয়া হয়, ততটা কৃতিত্বের দাবিদার হিউম নন। সমস্ত উপাদানকেই প্রশ্ন করে খুঁটিয়ে ভেঙেচুরে দেখতে হয় ঐতিহাসিককে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর :
১. জেমস মিল তাঁর বইতে ভারতের ইতিহাসকে কটি ভাগে ভাগ করেছেন ? মিল তাঁর বইতে মুসলিম যুগকে কী নামে অভিহিত করেছেন ?
উ: । মিল তাঁর রচিত বইটিতে ভারতের ইতিহাসকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন । হিন্দু যুগ , মুসলিম যুগ , ব্রিটিশ যুগ । প্রথম দুটো পর্যায় শাসকের ধর্মের নামে । আর শেষটা শাসকের জাতির নামে । “ মিল তাঁর বইতে মুসলিম যুগকে ‘ অন্ধকারময় ’ যুগ নামে অভিহিত করেছেন ।
২. মধ্যযুগের সব শাসকই কীভাবে মুসলিম ধর্মের সঙ্গে একাকার হয়ে গিয়েছিল ?
উঃ । ভারতের ইতিহাসের যুগ ভাগ করা শুরু হয় শাসকের ধর্মের পরিচয় নিয়ে । আর জেমস মিল ধরে নিলেন প্রাচীন ভারতের সব শাসকই হিন্দু । তাই জৈন ধর্মাবলম্বী চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য বা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বিম্বিসারের ইতিহাসও ঢুকে পড়ল হিন্দু যুগের ইতিহাসে । এইভাবেই মধ্যযুগের সব শাসকই মুসলিম ধর্মের সঙ্গে একাকার হয়ে গিয়েছিল ।
৩. ভারতীয়রা কীভাবে প্রমাণ করল যে , ব্রিটিশদের ভারতে সাম্রাজ্য বাড়ানোর দরকার নেই ??
উঃ । ভারতীয়রা সম্রাট অশোক থেকে সম্রাট আকবর , আর্যভট্ট থেকে চৈতন্যদেবের কথা তুলে প্রমাণ করল যে ভারতেরও ‘ সভ্যতা ' ছিল । সেই সভ্যতা ব্রিটিশ সভ্যতার থেকে খাটো নয় । তাই ব্রিটিশদের ভারতে সাম্রাজ্য বাড়ানোর দরকার নেই ।
৪. কেন স্কুলে ইতিহাস পড়ানো হয় ?
উঃ । ইতিহাস শুধু রাজা বা সম্রাটদের নাম , সাল তারিখ বা যুদ্ধের বর্ণনা নয় । এতে মিশে আছে নানা যুক্তি তর্কের খতিয়ান । ইতিহাসের সাক্ষ্য হাজির করে নিজের পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি তর্ক করা যায় । তার জন্য ইতিহাস জানা দরকার ।
৫. বঙ্কিমচন্দ্র বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে কী বলেছেন ?
উঃ । বঙ্কিমচন্দ্রের মতে , বিদেশিদের লেখা বাঙালির ইতিহাস ভুলে ভরা তাই বাঙালির ইতিহাস লিখতে হবে বাঙালিকেই । সেই বাঙালি — আমি , তুমি , যে কেউ অর্থাৎ সাধারণ মানুষও হতে পারে ।
৬. ইতিহাসের একই ঘটনা নিয়ে কেন প্রচুর তর্কবিতর্ক হয় ?
উঃ । বঙ্কিমচন্দ্রের মতানুযায়ী যদি সাধারণ মানুষ ইতিহাস রচনা করে তবে কোনো ঘটনাকে দেখার ভঙ্গি বদলে গেলেই ঘটনা ও তার ফলাফল নিয়ে মতামত ও তর্কবিতর্ক তৈরি হয় ।
৭. মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার কীভাবে ভারত ইতিহাসের কালবিভাজন করেন ? বঙ্কিমচন্দ্ৰ
উঃ । ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার তাঁর ' রাজাবলি ' নামক ইতিহাস বইতে সময় গোনা শুরু করেছিলেন মহাভারতের রাজা যুধিষ্ঠিরের কাল থেকে । আজ আর কেউ কলিযুগের ইতিহাস শব্দটি ব্যবহার করেন না । কিন্তু উনিশ শতকের গোড়ায় মৃতুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার তা করেছিলেন । তাঁর গ্রন্থে প্রতিটি ঘটনার পিছনেই তিনি অদ্ভুত সব যুক্তি দেখিয়েছিলেন । আজকের ইতিহাস বই এভাবে লেখা হয় না । শেষপর্যন্ত রাজাবলি কলিযুগের সময়ে এসে শেষ হয় ।
৮. আত্মজীবনী নামক উপাদানটি সোজাসুজি ব্যবহার করলে কী হবে এবং কেন হবে ?
উঃ । আত্মজীবনী নামক উপাদানটি সোজাসুজি ব্যবহার করা যাবে না , কারণ যিনি আত্মজীবনী লিখেছেন তিনি তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচারধারণা থেকে সবকিছু ব্যাখ্যা করেছেন । ঐতিহাসিক যদি সেই ব্যাখ্যা বিশ্বের না করেই পুরোপুরি মেনে নেন তাহলে বক্তব্য একপেশে হয়ে যায় ।
৯. সাম্রাজ্যবাদ কী ? এর দ্বারা কী হয়ে থাকে ?
উঃ । একটি শক্তিমান রাষ্ট্র বা দেশ তুলনায় দুর্বল রাষ্ট্র বা দেশের উপর প্রভুত্ব কায়েম করে নিজের দখলে আনে , এই প্রক্রিয়াকেই সাম্রাজ্যবাদ বলা হয় । সাম্রাজ্যবাদ একটি প্রক্রিয়া । এর দ্বারা দুর্বল রাষ্ট্র অথবা দেশটির জনগণ , সম্পদ সব কিছুই • শক্তিমান দেশটি নিজের প্রয়োজনমতো পরিচালনা করে ।
১০. নিজের ফেলে আসা আত্মীয়তাকে নতুন করে চিনে নেওয়ার জন্যই ইতিহাস পড়তে হয় — ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দাও ।
উঃ । স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রতিবেশী স্বাধীন রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দুটি রাষ্ট্র এক সময় ভারতবর্ষেরই আত্মীয় ছিল । দীর্ঘদিন পাশাপাশি থাকার পর একসময় তারা আলাদা হয়ে গেল , সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের আত্মীয়তার বাঁধনও আলগা হয়ে গেল । আজ তারা একে অন্যকে আত্মীয় বলে চিনতে পারে না । নিজের ফেলে আসা আত্মীয়তাকে চিনে নিতে এবং কেমন করে সেই আত্মীয়রা আলাদা হয়ে গেল তা জানতে ও বুঝতে গেলে ইতিহাস পড়তে হয় ।
১১. আন্দোলনের ইতিহাস লেখার সময় নাম না দিয়ে শুধু সংখ্যা দিয়ে মানুষগুলিকে বোঝানো হয় , কেন ?
উঃ । আন্দোলনের ইতিহাস লিখতে গেলে সময় , নাম না দিয়ে শুধু সংখ্যা দিয়ে মানুষ বোঝানো হয় । কারণ , যিনি বা যাঁরা সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাস লিখেছেন , তাঁদের চোখে কেবল সিধু - কানহুর নামই যথেষ্ট , মহাত্মা গান্ধি বা সুভাষচন্দ্ৰ বসুই জরুরি , তাঁদের কথা জানলেই ইতিহাস জানা হয়ে যায় । বাকি যারা , তারা কেবল হাজার হাজার মানুষ তাদের আলাদা করে নাম জানার দরকার নেই ।
১২. সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে উপনিবেশবাদের যোগাযোগ কেমন ? -আলোচনা করো ।
উঃ । সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে উপনিবেশবাদের যোগাযোগ স্পষ্ট । এক সময় ভারতের অর্থনীতি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির স্বার্থ অনুযায়ী চলত । বাংলায় নীলচাষ করা হতো ইংল্যান্ডের কাপড় কলে নীলের চাহিদা মাথায় রেখে । এর ফলে বাংলার ধান , পাট প্রভৃতি চাষ নষ্ট হতো এবং বাংলায় অনাহার দুর্ভিক্ষ দেখা দিত । উপনিবেশবাদের মূল কথাই এটা যে একটা অঞ্চলের জনগণ ও সম্পদকে অন্য একটি অঞ্চলের স্বার্থে ব্যবহার করা হবে । সেই অনুযায়ী ব্রিটেনের উপনিবেশ ভারতের কৃষিজ ফসল ব্রিটেনের স্বার্থে উৎপাদন করা হবে ।
১৩. আধুনিক যুগের ঐতিহাসিক উপাদানরূপে ফোটোগ্রাফ কতটা নির্ভরযোগ্য ? এই উপাদানটির ত্রুটি কোথায় ?
উঃ । ভারত ইতিহাসের আধুনিক যুগের অন্যতম ঐতিহাসিক উপাদান ফোটোগ্রাফ বা ক্যামেরায় তোলা ছবি । এইরকম ছবির সংগ্রহ থেকে সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ইতিহাসের নানা তথ্য জানা যায় । তাই আধুনিক যুগের ইতিহাস রচনায় ফোটোগ্রাফ বা ছবি একটি নির্ভরযোগ্য উপাদান । উপাদান হিসেবে ফোটোগ্রাফের অন্যতম ত্রুটি হলো ফোটোগ্রাফগুলি পুরোপুরি নৈর্ব্যক্তিক হয় না । যেমন , যিনি ছবি তুলছেন তাঁর দেখার উপরেই ক্যামেরার দেখা নির্ভর করে । ফলে একই বিষয়ের দুজনের তোলা দুটি ছবিতে দুরকম তথ্য বা অর্থ উঠে আসতে পারে ।
রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর:
১. জেমস মিল তাঁর গ্রন্থে ভারতের ইতিহাসকে যে তিনটি ভাগে বিভক্ত করেছেন তার যৌক্তিকতা আলোচনা করো ।
উঃ । বিখ্যাত দার্শনিক ও ঐতিহাসিক জেমস মিল ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে তিনটি খণ্ডে রচনা করেন ভারত ইতিহাসের সংকলন The history of British India , তাঁর এই গ্রন্থটি লেখার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের অতীত কথাকে এক জায়গায় জড়ো করা । ভারতে আগত ব্রিটিশ প্রশাসনে যুক্ত বিদেশিরা যাতে সেটি পড়ে ভারতবর্ষ বিষয়ে সাধারণ ধারণা পেতে পারেন । তিনি চেয়েছিলেন যে দেশকে শাসন করতে হবে তার ইতিহাসটাও জানতে হবে । এই গ্রন্থে মিল ভারতের ইতিহাসকে নিজের মতো করে হিন্দু যুগ , মুসলিম যুগ ও ব্রিটিশ যুগ এই তিনটি ভাগে ভাগ করেন ।
প্রথম দুটি যুগকে তিনি অভিহিত করলেন শাসকের ধর্মের নামে । আর শেষ যুগটি শাসকের জাতির নামে । অর্থাৎ ধর্ম নয় জাতির পরিচয়ে ব্রিটিশ সভ্যতা পরিচিত হতে চায় । এই ধারণা আধুনিক ঐতিহাসিকগণ পরিত্যাজ্য করেছেন । কারণ প্রাচীন ভারতের সমস্ত রাজা বা জনগণ হিন্দু ছিলেন না । চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের মতো জৈন রাজা বা কণিষ্কের ন্যায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাজা তথা জনগণরাও ছিলেন । অপরদিকে মধ্যযুগে শুধুই মুসলিম জনগণ বা শাসক ছিলেন না । শাসক মুসলিম হলেও জনগণ অধিকাংশই ছিলেন হিন্দু । অপরদিকে শেষ যুগটি খ্রিস্টান যুগ না হয়ে হলো ব্রিটিশ যুগ ।
এখানে মিলের আধুনিক জাত্যাভিমানের পরিচয় পাওয়া যায় । সেই সঙ্গে মিল লিখলেন মুসলিম যুগ ভারত ইতিহাসে ‘ অন্ধকারময় ' যুগ । পাশাপাশি হিন্দু যুগ বিষয়েও মিল অশ্রদ্ধা দেখিয়েছিলেন । তাই মিলের গ্রন্থটি তাঁর সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গীর জন্য কখনোই আদর্শ ইতিহাস গ্রন্থের মর্যাদা পায়নি এবং তাঁর এই ইতিহাসের বিভাজনও গ্রহণযোগ্য হয়নি । এই কারণে ভারত ইতিহাস যুগের হিসেবে ধীরে ধীরে প্রাচীন যুগ , মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগ এই মানদণ্ডেই বিভক্ত ও স্বীকৃত হয়ে গেল ।
২. ইতিহাস থেকে বর্তমানের দূরত্ব বেশি হলে কী হতে পারে ব্যাখ্যা করে বোঝাও ।
উঃ । ইতিহাস থেকে বর্তমানের দুরত্ব সময়ের হিসাবে যত বেশি হবে ইতিহাসের বিষয় নিয়ে বিবাদ বিতর্কের চরিত্র ততই বদলে যাবে । উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে সম্রাট অশোকের ভাবনাচিন্তায় কলিঙ্গযুদ্ধের প্রভাব কি ছিল তা নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও আজকের মানুষের জীবনে এই বিষয়টা আর ততটা প্রাসঙ্গিক নয় । কিন্তু প্রশ্নটা যদি হয় ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষের বিভাজন কি কোনোভাবে ঠেকানো যেত না , তা হলে প্রশ্নটা সামাজিকভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে । আজও ভারতের অনেক মানুষ দেশভাগের স্মৃতিতে কষ্ট পান ফলে প্রশ্নটা এক্ষেত্রে অনেক সরাসরি বর্তমান সমাজকে ছুঁয়ে যায় । এ থেকেই বোঝা যায় ইতিহাসের সময় যতই দূরে হয় প্রাসঙ্গিকতার সম্ভাবনা ততই কমে যায় ।
৩. সাম্রাজ্যবাদী ভাবধারার বিরুদ্ধে ভারতের শিক্ষিত জনগণ কীভাবে নিজেদের ইতিহাস চর্চা শুরু করেছিলেন ?
উঃ । সাম্রাজ্যবাদী ভাবধারার বিরুদ্ধে ভারতের শিক্ষিত জনগণ ধীরে ধীরে নিজেদের মধ্যে জোট বাঁধলেন । ইংরেজি শিক্ষা , সরকারি চাকরি পেলেও দেশীয় সমাজে শিক্ষিত জনগণ নিজেদের দাবীগুলি নিয়ে নিজেদের মতো করে কথা বলা শুরু করলেন । তার মধ্যে ইতিহাস চর্চাও শুরু হলো । জেমস মিলের ইতিহাসের যুক্তিকেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীর বিশ্লেষণের বিপক্ষে ব্যবহার শুরু হলো ।
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস , মধ্যযুগের ইতিহাস খুঁজে দেখা গেল যে ব্রিটিশরা যে বলে থাকেন ভারতের ইতিহাস নেই তা ঠিক নয় , ইতিহাস আছে , নানা উপাদান থেকে তাকে পূর্ণাঙ্গ চেহারা দিতে হবে । দেশের মানুষ যখন ইতিহাস লিখলেন তখন বিভিন্ন ঘটনার অন্য বিশ্লেষণ হাজির হলো । সাম্রাজ্যের স্বার্থের অপরদিকে দেশের চিন্তাও ইতিহাসে জায়গা পেতে শুরু করল । উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে ব্রিটিশ ঐতিহাসিকরা অভিযোগ তুলেছিলেন যে সিরাজ - উদ - দৌলা ব্রিটিশ কর্মচারীদের হত্যা করেছিলেন । কিন্তু ভারতীয় ঐতিহাসিকগণ যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করে দেন যে সেই অভিযোগ মিথ্যা ছিল ।
৪. ইতিহাসের উপাদানৰূপে আত্মজীবনী কতটা গ্রহণযোগ্য ?
উঃ । ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি আর্থ সামাজিক রাজনৈতিক তথ্য জানতে আত্মজীবনী বা জীবনচরিতের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কিন্তু সোজাসুজি সেই আত্মজীবনী ব্যবহার করলে কিছুটা অসুবিধা দেখা যায় । কারণ যিনি সেই জীবনী রচয়িতা তিনি তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচারধারা থেকেই সব কিছু ব্যাখ্যা করেছেন । ঐতিহাসিকরা যদি সেই ব্যাখ্যা পুরোপুরি মেনে নেন তাহলে বক্তব্যটি একপেশে হয়ে যায় । কখনো বা ঐতিহাসিকরা ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছে যেতে পারেন ।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউমের জীবনীকার উইলিয়াম ওয়েডারবার্ন তাঁর লেখায় হিউমকেই ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব দিয়েছেন । অথচ পরে দেখা গেছে যতটা কৃতিত্ব হিউমকে দেওয়া হয়েছে আদৌ ততটা কৃতিত্বের দাবীদার তিনি নন । ঐতিহাসিকরা যদি ওয়েডারবার্নের কথা পুরো মেনে নিতেন তাহলে এই নতুন বিশ্লেষণ পাওয়া যেত না । তাই আত্মজীবনীর সমস্ত তথ্যই বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস নাও হতে পারে । তবে মধ্যযুগের ' বাবরনামা ' ও আধুনিক যুগের হিটলারের ‘ মেইনক্যাম্ফ ' গ্রন্থ দুটির ঐতিহাসিক মূল্য বর্তমান ।
No comments:
Post a Comment