মাটি দূষণ সপ্তম শ্রেণীর ভূগোল অষ্টম অধ্যায়| class 7 8th chapter geography question answer |
. প্রকৃতির সব থেকে বড়ো দান কোনটি?
উঃ। মাটি প্রকৃতির সব থেকে বড়ো দান।
2. মাটি কোথায় রয়েছে?
উঃ। পৃথিবীর স্থলভাগের উপরের স্তরে মাটি রয়েছে।
3. মাটি কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে?
উঃ। হাজার হাজার বছর ধরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা শিলা ক্ষয় হয়ে মাটির সৃষ্টি হয়েছে।
4. মাটির ক্ষয় ও দূষণের প্রধান কারণ কী ?
উঃ। প্রবল জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপে মাটির অতিরিক্ত এবং অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার মাটির ক্ষয় ও দূষণের প্রধান কারণ।
5. কোন্ কোন্ পদার্থ মাটিতে মেশে না ?
উঃ। পলিথিন, প্লাস্টিক মাটিতে মিশে যায় না।
6. রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারে কী হয়?
উঃ। মাটিতে থাকা ছোটো প্রাণী ও পোকামাকড় মারা যায়।
7. অ্যাসিড বৃষ্টি কোন্ দূষণের ফলে হয়ে থাকে ?
উঃ। কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাসের কারণেও যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়ায় বায়ুদূষণ ঘটলে অ্যাসিড বৃষ্টি হয়ে থাকে।
৪. সার কয়প্রকার ও কী কী?
উঃ। সার দুই প্রকার। যথা—জৈব সার ও অজৈব সার।
9. স্থলভাগের মোট কত শতাংশ স্থানে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার কত শতাংশ মানুষ বাস করছে?
উঃ। পৃথিবীর স্থলভাগের মোট 30 শতাংশ ভাগে মোট জনসংখ্যার 90 শতাংশ মানুষ বাস করে।
10. ফসলে থেকে কীভাবে ক্যানসার হতে পারে?
উঃ। ফসলে কীটনাশকের অংশ থেকে গেলে তা থেকে ক্যানসারও হতে পারে।
11. ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া কোথায় জন্মায় ?
উঃ। বাড়ি, বাজার, হাসপাতাল ও শহরের আবর্জনার স্তূপে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জন্মায়।
12. প্লাস্টিক কী?
উঃ। প্লাস্টিক হল একপ্রকার কৃত্রিম জৈব যৌগ ও অপচনশীল পদার্থ।
13. কত সালে ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনা ঘটে?
উঃ। 1984 সালে ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনা ঘটে।
14. ইউক্রেনে কোথায় কত সালে দুর্ঘটনা ঘটে?
উঃ। 1986 সালে ইউক্রেনের চেরনোবিল পরমাণু কেন্দ্রে দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রশ্নের মান -2/3
1. 'মাটিই জীবনের ধারক কথাটি ব্যাখ্যা করো।
উঃ। প্রকৃতির সবথেকে বড়ো দান হল মাটি। পৃথিবীর স্থলভাগের উপরের স্তরে রয়েছে মৃত্তিকা। এই মাটি বহু বছর ধরে শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হতে হতে সৃষ্টি হয়। মানুষ ও সমস্ত উদ্ভিদ-প্রাণীর আবাসস্থল, খাদ্য সংস্থান ও জীবনধারণ হয় এই মাটি থেকেই। তাই মাটিকেই জীবনের ধারক বলে।
2. মাটি কীভাবে দূষিত হয় ?
উঃ। কারখানার দূষিত বর্জ্য পদার্থ, আবর্জনা, প্লাস্টিক, রাসায়নিক সার, কীটনাশক তেজস্ক্রিয় রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি মাটির সাথে মিশে উর্বরতা শক্তি বা গুণগত মান হারালে মাটি দূষিত হয়।
3. মাটির উর্বরতা বা গুণমানের ওপর কীভাবে ফসলের ফলন নির্ভর করে?
উঃ। গঙ্গানদীর দুই তীরের পলিমাটিতে প্রচুর ধান, পাট, শাকসবজি চাষ হয়। কিন্তু পুরুলিয়ার রুক্ষ মাটিতে তেমন ভালো ফসল হয় না, এর কারণ হল মাটির উর্বরতা ও গুণমান।
4. বাগানে একটি ফুল গাছ বা কোনো গাছের গোড়ায় যদি ময়লা বা তেল জাতীয় কিছু ফেলা হয় কী হবে?
উঃ। ফুলগাছ বা কোনো গাছের গোড়ায় ময়লা বা তেল জাতীয় কিছু ফেললে সেই মাটি থেকে গাছ পুষ্টি নিতে পারবে না। কারণ গাছের গোড়ার মাটিটা দূষিত হয়ে যাবে। তাই গাছটি মরে যাবে।
5. ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনার ফলে কী হয়েছিল ?
উঃ। 1984 সালে ভারতের ভূপালে ইউনিয়ন কার্বাইড-এর কারখানা থেকে মাঝরাতে অতি বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে মেশে। ফলে প্রচুর মানুষ মারা যায় ও বহু মানুষ পঙ্গু হয়ে যায়।
6. তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কীভাবে মৃত্তিকা দূষণ হয় ?
উঃ। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ইটভাটার ছাই ও নানারকম কাঠকয়লার পোড়া অংশ মাটির সাথে মেশে। ফলে মৃত্তিকা দূষিত হয়। অপরদিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য মাটির দূষণ ঘটায়।
7. 1986 সালে ইউক্রেনে ও 2011 সালে জাপানে কোন দুর্ঘটনা ঘটে?
উঃ। 1986 সালে ইউক্রেনের চেরনোবিল পরমাণু কেন্দ্রে ও 2011 সালে জাপানের ফুকুশিমা ডাইচিতে দুর্ঘটনার ফলে আশপাশের অঞ্চলের মাটি, জল, বাতাসে ভয়াবহ তেজস্ক্রিয় দূষণ ছড়ায় এবং প্রচুর মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন।
8. গৃহস্থালির কাজকর্ম থেকে কীভাবে মাটি দূষিত হয়?
উঃ। বাড়ি, বাজার, হাসপাতাল ও শহরের আবর্জনার স্তূপে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। শৌচাগারের জল, মলমূত্র নষ্ট হয় না। ফলে এগুলো থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক মাটিতে মিশে দূষণ ঘটায়। মাটিতে মিশছে। ফলে বিভিন্ন জীবাণু থেকে রোগের সংক্রমণ ঘটছে। গৃহস্থালির ব্যবহৃত পলিথিন, প্লাস্টিক মাটিতে মিশে দূষণ।
প্রশ্নের মান -5/7
1. মাটি দূষণের কারণগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উঃ। (i) শিল্পপ্রতিষ্ঠানের থেকে দূষণ : শিল্পকারখানা থেকে দূষিত বর্জ্য জল, তেল জাতীয় পদার্থ, প্লাস্টিক, ধাতব দ্রব্য, নানান রাসায়নিক দ্রব্য ইত্যাদি মাটিতে মিশে মাটিকে দূষিত করে। কলকারখানা থেকে নিঃসৃত বিষাক্ত গ্যাস বায়ুদূষণ ঘটায় এর ফলে অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটে যা থেকে মাটি দূষিত হয়। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উড়ন্ত ছাই মাটিতে মিশে মাটির স্বাভাবিক উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে দেয়।
(ii) জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার : কৃষিকাজের ক্ষেত্রে খাদ্যের প্রয়োজন বৃদ্ধির কারণে বেশি উৎপাদনের জন্য জমিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হলে সাময়িকভাবে জমির ফলন বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এই সার মাটির জল ও বায়ু প্রবেশের ছিদ্র বন্ধ করে দেয়। ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়। বেশি কীটনাশক যেমন ডিডিটি, বি এইচ সি টক্সাকিন ব্যবহার করলে ফসলের শত্রু পোকাদের সাথে বন্ধু পোকামাকড় ও ছোটো প্রাণীরাও মরে যায়। ফলে জৈব পদার্থের অভাবে মাটির গুণমান নষ্ট হয়। (iii) প্লাস্টিক জাতীয় আবর্জনা : প্লাস্টিক হল কৃত্রিম জৈব যৌগ। এটি পচনশীল নয় ও সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। বর্তমানে
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। এগুলি বর্জ্যপদার্থ হিসাবে নালা-নর্দমায় জমে নিকাশি ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মাটি তার স্বাভাবিক উর্বরতা শক্তি হারিয়ে ফেলে ও জমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
(iv) অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি : অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য তাদের ব্যবহৃত গৃহস্থালির আবর্জনা মাটিতে ফেলা হয় সেগুলো মাটিতে মিশে মাটিকে দূষিত করে।
(v) অতিমাত্রায় বনচ্ছেদন : নগরায়ণের ফলে জনসংখ্যা ও বাসস্থানের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর জন্য নির্বিচারে গাছপালা কাটার ফলে বনভূমি ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে। ফলে ভূমিক্ষয় বেড়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে। মাটির উর্বরতা শক্তি কমে গিয়ে সামগ্রিকভাবে ভূমিদূষণ হচ্ছে।
2. মাটি দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবগুলি আলোচনা করো ।
উঃ। (i) মাটিদূষণের ফলে চাষবাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলেছে। (ii) মাটিতে সিসা, পারদ, দস্তা ইত্যাদি ধাতু মিশে মাটির অম্লত্ব, ক্ষারকীয়তা গুণের পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। (iii) মাটিদূষণ মাটির মধ্যে উপস্থিত উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে নষ্ট করে দেয় ও জৈব পদার্থের অভাব ঘটে। (iv) বেশি উৎপাদনের জন্য অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারে ফসলের স্বাদ পরিবর্তিত হয়। ফসলের খাদ্যগুণ কমে যায়। ফলে মানুষের শরীরে অপুষ্টিজনিত নানা রোগের সৃষ্টি হয়। ফসলে কীটনাশকের অংশ থেকে গেলে মানুষের স্নায়ু দুর্বল হয়ে যায়, চোখের অসুখ, এমনকি ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া একই শস্যের বহুবার চাষ মাটির উর্বরতা কমিয়ে দিয়ে মাটির গুণমান নষ্ট করে। (v) পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্ৰ থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় পদার্থ মাটিতে মিশলে সেই দূষিত মাটিতে উৎপন্ন ফসল ও উদ্ভিদে ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় বিকিরণ এর প্রভাব থেকে যায়। মানব শরীরে জীবকোশ বিনষ্ট হয়ে যায়। মানবদেহে ক্যানসার, ভ্রূণস্থ শিশুর ক্ষতি, বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হয়। (vi) মাটিদূষণ সমস্ত জীবকুলের চরম ক্ষতি করে। তাই পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হবার জন্য মাটির দূষণ অনেকটাই দায়ী।
3. মাটি দূষণ প্রতিরোধের উপায়গুলি কী কী?
উঃ। (i) গৃহস্থালির বর্জ্য আবর্জনা অন্যত্র এবং নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে ফেলা উচিত। (ii) প্লাস্টিক বা পলিথিন জাতীয় জিনিসপত্রের পরিবর্তে কাগজ, শালপাতা, পাটের ব্যাগ বা মাটির পাত্র ব্যবহার করা উচিত। (iii) কৃষিজমিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাতে হবে। এর পরিবর্তে জৈব সারের বেশি পরিমাণ ব্যবহার করতে হবে। (iv) কারখানায় উপযুক্ত প্রযুক্তির মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন করতে হবে। (v) শৌচাগার ছাড়া যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করা উচিত নয়। (vi) তেজস্ক্রিয় পদার্থ ব্যবহারের সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। (vii) দাহ্য আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলা উচিত। (viii) তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই যথাযথ উপায়ে পুনরায় ব্যবহার করে ভূমিদূষণ রোধ করতে হবে। (ix) বাগান ও রাস্তার ধারে বেশি করে গাছপালা লাগাতে হবে।
No comments:
Post a Comment