▧ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর: প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3
1. এশিয়া মহাদেশের আয়তন ও সীমা বর্ণনা করো।
উঃ। পৃথিবীর স্থলভাগের তিন ভাগের এক ভাগ জুড়ে রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম ও জনবহুল মহাদেশ এশিয়া। এই মহাদেশের আয়তন 44,579,00 বর্গকিলোমিটার। এর পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগর, পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর, কাস্পিয়ান সাগর উত্তরে সুমেরু মহাসাগর ও দক্ষিণে ভারত মহাসাগর। এশিয়া এবং ইউরোপ দুটো মহাদেশ ইউরেশিয়া নামক অখন্ড স্থলভাগের অংশ। এশিয়া ও ইউরোপের মাঝে রয়েছে ইউরাল পর্বত ও ইউরাল নদী। লোহিত সাগর ও সুয়েজ খাল এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশকে আলাদা করেছে।
2. এশিয়া মহাদেশের অবস্থান বর্ণনা করো।
উঃ। ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশের পূর্বদিকে অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশ এশিয়া। এই মহাদেশটি নিরক্ষরেখার 126 দক্ষিণ অক্ষাংশ থেকে উত্তরে 77° 43 উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। এশিয়া মহাদেশ 160° 40 পশ্চিম পূর্ব দ্রাঘিমারেখা থেকে পূর্বে 169°40 পশ্চিম দ্রাঘিমা রেখার মধ্যে অবস্থিত। আন্তর্জাতিক তারিখরেখা এই মহাদেশের পূর্বে 170° পশ্চিম দ্রাঘিমা রেখার মধ্যে অবস্থিত। আন্তর্জাতিক তারিখরেখা এই মহাদেশের পূর্বপ্রান্ত থেকে উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত হয়েছে।
3. এশিয়া মহাদেশকে চরম বৈশিষ্ট্যের মহাদেশ' বলা হয় কেন?
উঃ। পৃথিবীর স্থলভাগের তিনভাগের একভাগ জুড়ে রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম ও জনবহুল মহাদেশ এশিয়া। ভাবলে অবাক হতে হয় চারটি ইউরোপ অথবা দেড়খানা আফ্রিকার সমান এই এশিয়া মহাদেশ এতই বিশাল যে এর পশ্চিম প্রান্তে যখন সূর্য ওঠে তখন পূর্বপ্রান্তে সূর্যাস্তের সময় হয়ে যায়। সুউচ্চ পর্বতশ্রেণি, বিরাট মালভূমি, বিস্তীর্ণ সমভূমি ও উর্বর নদী উপত্যকার মহাদেশ এশিয়ার যে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা অন্য কোনো মহাদেশে নেই। তাই এশিয়া মহাদেশকে চরম বৈশিষ্ট্যের মহাদেশ” বলা হয়।
4. এশিয়া মহাদেশ ‘সভ্যতার জন্মক্ষেত্র ও প্রাচ্য সংস্কৃতির ঐতিহ্য'—আলোচনা করো।
উঃ। এশিয়া মহাদেশ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শিল্প সংস্কৃতি, জনগোষ্ঠী ও জীবনযাত্রার বৈচিত্র্যে অনন্য। খ্রিস্টজন্মের 3500- 5000 বছর আগে এশিয়ার বড়ো বড়ো নদীগুলির উর্বর উপত্যকায় বেশ কয়েকটি নদীমাতৃক সভ্যতার জন্ম হয়েছিল। সিন্ধু নদের তীরে হরপ্পা, মহেঞ্জোদাড়ো ও সিন্ধু সভ্যতার বিকাশ হয়েছিল। তেমনই উন্নত মেসোপটেমিয়া ও সুমের সভ্যতা উদ্ভব হয়েছিল ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদীর তীরে। হোয়াংহো নদী উপত্যকা ছিল চিন। সভ্যতার আঁতুড়ঘর। অতীতকাল থেকে শুরু করে এশিয়া মহাদেশ তাই আজও প্রাচ্য সংস্কৃতির ধারক এবং ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ।
5. পামীর গ্রন্থি কথাটির তাৎপর্য কী?
উঃ। পামীর হল পৃথিবীর সর্বোচ্চ মালভূমি। বিভিন্ন দিক থেকে অনেকগুলি ছাত্রবন্ধু সপ্তম শ্রের্ব তশ্রেণি এসে পামীর মালভূমিতে মিলিত হয়ে একটি গ্রন্থিতে পরিণত হয়েছে। তাই পামীর মালভূমিকে পামীর গ্রন্থি বলে।
6. পামীর মালভূমিকে পৃথিবীর ছাদ' বলা হয় কেন?
উঃ। পামীর মালভূমি ভারতের জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের উত্তর-পশ্চিম দিকে তাজাকিস্তান রাষ্ট্রে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ মালভূমি। এর উচ্চতা 4.873 মি। এই মালভূমিটি এত উঁচুতে অবস্থিত হওয়ায় মালভূমি অঞ্চলটি পৃথিবীর ছাদের মতো অবস্থান করছে বলে মনে হয়। তাই এই পামীর মালভূমিকে 'পৃথিবীর ছাদ' বলে।
7. এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ পূর্ব দিকের সমভূমি ও দ্বীপপুঞ্জগুলির বিবরণ দাও।
উঃ। এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ পূর্ব দিকে কতগুলি নদীর পলিদ্বারা কয়েকটি সমভূমি তৈরি হয়েছে এগুলি হল (i) উত্তর চিন সমভূমি। (ii) সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সমভূমি। (iii) মেসোপটেমিয়া সমভূমি। এশিয়ার দক্ষিণ পূর্ব দিকে প্রশান্ত মহাসাগরের উপর কতকগুলি দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে এগুলি হল (i) জাপানের দ্বীপ সমূহ। (ii) ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপসমূহ। (iii) কিউরাইল দ্বীপপুঞ্জ ও (iv) ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ
প্রতিটা প্রশ্নের মান -5/8
1. এশিয়া মহাদেশের প্রাকৃতিক পরিচয় দাও।
উঃ। এশিয়ার ভূপ্রাকৃতিক মানচিত্রটি দেখলে অবাক হতে হয়। পৃথিবীতে আর কোনো মহাদেশ নেই যার মাঝখানে এত পাহাড় পর্বতের সমাবেশ ঘটেছে। এশিয়া মহাদেশকে প্রাকৃতিক ভাবে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়, এগুলি হল (i) মধ্যভাগের পার্বত্য অঞ্চল। (ii) দক্ষিণের প্রাচীন মালভূমি অঞ্চল এবং (iii) উত্তরের বিশাল সমতলভূমি।
(i) মধ্যভাগের পার্বত্য অঞ্চল : এই পার্বত্য অঞ্চলটি পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর থেকে পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। পামীর এবং আর্মেনীয়া এই দুটি পর্বতগ্রন্থি থেকে খুব উঁচু উঁচু পর্বতমালা নানা দিকে ছড়িয়ে গেছে। এগুলির গড় উচ্চতা 4000 মিটারেরও বেশি।
(ii) দক্ষিণের প্রাচীন মালভূমি অঞ্চল : এশিয়া মহাদেশের মধ্যভাগের পার্বত্য অঞ্চলের দক্ষিণে বেশ কিছু প্রাচীন মালভূমি রয়েছে যেগুলি কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত। এখানকার নদীগুলির প্রবাহ দেখলে বোঝা যায় যে অঞ্চলটির ঢাল পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে। এর মধ্যে রয়েছে আরবের মালভূমি, দাক্ষিণাত্যের মালভূমি ও ইন্দোচিন মালভূমি ।
(iii) উত্তরের বিশাল সমতল ভূমি : মধ্যভাগের পার্বত্য অঞ্চলের উত্তরে একটি বড়ো সমতলভূমি রয়েছে। এই সমভূমি পৃথিবীর বৃহত্তম সমভূমি। এই সমভূমির মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলির প্রবাহ দেখে বোঝা যায় এই অঞ্চলটি দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে ঢালু।
2. এশিয়া মহাদেশকে বৈচিত্র্যময় দেশ বলা হয় কেন ?
উঃ। আয়তন, প্রাকৃতিক পরিবেশ ইত্যাদি দিক দিয়ে এশিয়া এক বৈচিত্র্যময় মহাদেশ।
(i) ভূ-তাত্ত্বিক বৈচিত্র্য : প্রাচীন ভূখণ্ড আঙ্গারাল্যান্ড ও গন্ডোয়ানাল্যান্ড যেমন আছে, তেমনি নবীন হিমালয় পর্বতের অবস্থানও এই মহাদেশে দেখা যায়।
(ii) ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য : এই মহাদেশে একদিকে পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট রয়েছে, অন্যদিকে পৃথিবীর নিম্নতম হ্রদ মরুসাগরও আছে। সামুদ্রিক অংশে পৃথিবীর নিম্নতম স্থান মারিয়ানা সমুদ্রখাত আছে।
(iii) নদ-নদী ও হ্রদের বৈচিত্র্য : বরফগলা জলে পুষ্ট দীর্ঘ নদীর মতো অতি ক্ষুদ্র নদীও এই মহাদেশে দেখতে পাওয়া যায়। স্বাদু জলের হ্রদ উলার যেমন আছে, তেমনই লবণাক্ত জলের হ্রদও আছে।
(iv) জলবায়ুগত বৈচিত্র্য : পৃথিবীর শীতলতম স্থান ঐমিয়াকন ও অন্যতম শীতলতম স্থান ভারখয়ানস্ক যেমন আছে, তেমনই উন্নতম স্থান জেকোবাবাদ রয়েছে।
(v) স্বাভাবিক উদ্ভিদের বৈচিত্র্য : এই মহাদেশেই পৃথিবীর বৃহত্তম বনভূমি তৈগার সাথে উদ্ভিদশূন্য মরুপ্রান্তরও রয়েছে।
(vi) জনবসতি অঞ্চলের বৈচিত্র্য : পৃথিবীর সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, তেমনই সাইবেরিয়া জনশূন্য অঞ্চল। এছাড়া বিভিন্ন অধিবাসীদের ধর্মের, জীবনযাত্রা প্রণালীর মধ্যেও অনেক বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। তাই বিশাল এই এশিয়া মহাদেশকে বৈচিত্র্যময় দেশ বলা হয়।
3. এশিয়ার মধ্যভাগের পার্বত্য অঞ্চলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উঃ। এশিয়া মহাদেশের মধ্যভাগের এই পার্বত্য অঞ্চলকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়; যথা- (i) পামীর গ্রন্থি থেকে বিস্তৃত পর্বতসমূহ। (ii) পূর্ব-হিমালয়ের গ্রন্থি থেকে বিস্তৃত পর্বতসমূহ। (iii) পশ্চিমে আর্মেনীয় গ্রন্থি থেকে বিস্তৃত পর্বতসমূহ।
(i) পামীর গ্রন্থি থেকে বিস্তৃত পর্বতসমূহ : ভারতের জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের উত্তর-পশ্চিমদিকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ মালভূমি ‘পামীর' (উচ্চতা 4873 মিটার) অবস্থিত, একে পৃথিবীর ছাদ বলা হয়। এই অঞ্চলে এশিয়ার প্রধান প্রধান পর্বতগুলো মিলিত হওয়ায় এই অঞ্চলকে পামীর গ্রন্থিও বলা হয়। (a) পামীর গ্রন্থি থেকে দক্ষিণ-পূর্বদিকে বিস্তৃত হয়েছে কারাকোরাম পর্বতমালা, এই পর্বতের গডউইন অস্টিন বা K2 পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ। (b) পামীর গ্রন্থি থেকে দক্ষিণপূর্ব এবং পূর্বদিকে কারাকোরাম পর্বতের দক্ষিণ দিয়ে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতমালা হিমালয়। এই পর্বতের মাউন্ট এভারেস্ট পৃথিবীর সর্বোচ্চ গিরিশৃঙ্গ। এর উচ্চতা 8,848 মিটার বা 29,028 ফুট। (c) পামীর গ্রন্থির উত্তর- পূর্বদিকে কুয়েনলুন এবং আলতিনভাগ পর্বত অবস্থিত। কুয়েনলুন পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মার্কোপোলো। আলতিনতাগ পর্বতের উত্তর-পূর্বে থিংগান পর্বত এবং পূর্বদিকে নানসান ও সিনলিংসান পর্বত অবস্থিত। (d) পামীর গ্রন্থি থেকে তিয়েনসান, ইয়ারোনয়, আলতাই, খান গাই, সয়ান ও স্তানোভয় পর্বত এশিয়া মহাদেশের প্রায় উত্তর-পূর্ব সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত। আবার পামীর গ্রন্থি থেকে সুলেমান ও খিরথর পর্বত দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিন্দুকুশ পর্বত পশ্চিমদিকে অবস্থিত।
(ii) পূর্ব হিমালয়ের পর্বত গ্রন্থি থেকে বিস্তৃত পর্বতসমূহ : হিমালয় পর্বতের পূর্বদিকে অবস্থিত একটি ছোটো পর্বত গ্রন্থি থেকে, পাটকোই, নাগা, আরাকানয়োমা প্রভৃতি পর্বত দক্ষিণদিকে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এই পর্বতসমূহের একটি অংশ সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে পূর্বদিকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
(iii) পশ্চিমে আর্মেনীয় গ্রন্থি থেকে বিস্তৃত পর্বতসমূহ ঃ কৃয়সাগরের দক্ষিণদিকে অবস্থিত 'আর্মেনীয় মালভূমি তেও 'আর্মেনীয় গ্রন্থি' নামে একটি ছোটো পর্বতগ্ৰন্থি আছে, যা পামীর গ্রন্থির তুলনায় অপেক্ষাকৃত নীচু এবং ছোটো। এই পর্বতগ্রন্থির উত্তরে ককেশাস পর্বত, দক্ষিণ-পূর্বে জাগ্রোস পর্বত এবং পূর্বদিকে এলবুর্জ পর্বত অবস্থিত। পশ্চিমদিকে পন্টিক পর্বত ও তার দক্ষিণদিকে টরস পর্বত অবস্থিত। জাগ্রোস পর্বত দক্ষিণ-পূর্বদিকে গিয়ে খিরথর পর্বতের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এলবুর্জের পূর্বদিকে আছে কোহিবাবা পর্বত এবং তারও পূর্বদিকে হিন্দুকুশ পর্বত অবস্থিত।
4. এশিয়া মহাদেশের উত্তরের বিশাল সমতল ভূমির পরিচয় দাও।
উঃ। এশিয়ার উত্তরের এই সমভূমি পৃথিবীর বৃহত্তম সমভূমি সমতল ভূমিকে প্রাকৃতিক গঠন অনুযায়ী তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। (i) তুরানের নিম্নভূমি। (ii) সাইবেরিয়ার সমভূমি। (iii) পূর্বের উচ্চভূমি বা শিল্ড সমভূমি।
(i) তুরানের নিম্নভূমি : উত্তরের সমভূমির দক্ষিণ পশ্চিমে কাস্পিয়ান ও আরল সাগরের চারিদিকে অবস্থিত এই নিম্নভূমি তুরানের নিম্নভূমি নামে পরিচিত।
(ii) সাইবেরিয়ার সমভূমি : এশিয়ার উত্তরে ওব, ইনিসি ও লেনা নদীর পলিসঞ্চয় এবং হিমবাহের কাজের ফলে এই সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে। এই সমভূমিতে মাঝে মাঝে বন্যা দেখা যায়।
(iii) পূর্বের উচ্চভূমি বা শিল্ড সমভূমি ঃ এই সমভূমির উত্তর পূর্ব দিকে প্রাচীন মালভূমি ক্ষয়ে যাওয়ার ফলে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে তাকে পূর্বের উচ্চভূমি বা শিল্ড সমভূমি বলা হয়।
No comments:
Post a Comment