এশিয়া মহাদেশ সপ্তম শ্রেণীর ভূগোল নবম অধ্যায় |class 7 9th chapter geography question answer| - Studing School

Fresh Topics

Monday, April 3, 2023

এশিয়া মহাদেশ সপ্তম শ্রেণীর ভূগোল নবম অধ্যায় |class 7 9th chapter geography question answer|

এশিয়া মহাদেশ সপ্তম শ্রেণীর ভূগোল নবম অধ্যায় |class 7 9th chapter geography question answer| 





1.  চরম বৈশিষ্ট্যের মহাদেশ কাকে বলা হয়?
উত্তর - এশিয়া মহাদেশ কে

2. ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশ কে একত্রে কি বলা হয়?
উত্তর - ইউরেশিয়া

3. কোন পর্বত ইউরোপ এবং এশিয়া মহাদেশের সীমানা নির্দেশ করে?
উত্তর - ইউরাল পর্বত

4. এশিয়া ও আফ্রিকার মহাদেশ পৃথক হয়েছে কিসের দ্বারা?
উত্তর - লোহিত সাগর ও সুয়েজ খাল দ্বারা

5. এশিয়া মহাদেশে মোট দেশের সংখ্যা কয়টি?
উত্তর - 48 টি

6. পৃথিবীর ছাদ কাকে বলা হয়?
উত্তর - পামির মালভূমি কে

7. পৃথিবীর বৃহত্তম হ্রদের নাম কি?
উত্তর - ক্যাস্পিয়ান সাগর

8. পৃথিবীর বৃহত্তম বনভূমির নাম কি?
উত্তর - তৈ গা বনভূমি

9. কোন মহাদেশের সবথেকে বেশি মানুষ বসবাস করে?
উত্তর - এশিয়া মহাদেশে

10. তিব্বত মালভূমি অবস্থান উল্লেখ করো?
উত্তর - এশিয়া মহাদেশের হিমালয় ও কুয়েনলুন পর্বতের মাঝে রয়েছে তিব্বত মালভূমি।

11. এশিয়া মহাদেশের দুটি উত্তর বাহী নদীর নাম লেখ?
উত্তর - লুনী নদী, ওব নদী উত্তর বাহী নদীর উদাহরন

12. এশিয়া মহাদেশের উত্তর বাহী নদী গুলির মধ্যে কোনটির দৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি?
উত্তর - ইনিসি নদী

13. উত্তরবাহী নদী গুলিতে প্রায় বন্যা হয় কেন?
উত্তর - উত্তর বাহী নদী গুলির উত্তরাংশ বা মোহনা হিম মন্ডলে অবস্থিত বলে এই অংশে সব সময় বরফ জমে থাকে। তাই শরৎ ও বসন্তকালে উত্তর বাহী নদী গুলির উৎস অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদী গুলির অতিরিক্ত জল মোহনা অঞ্চলে সঞ্চিত বরফে বাঁধা পেয়ে উক্ত অঞ্চল গুলিতে প্রায় বন্যা ঘটায়।

14. এশিয়া মহাদেশের কয়েক টি দক্ষিণ বাহী নদীর নাম লেখ? 
উত্তর - গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেকং, সিন্ধু, টাইগ্রিস ইউফ্রেটিস নদী প্রভৃতি এশিয়া মহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ বাহী নদী।

15. এশিয়ার দক্ষিণ বাহী নদী গুলির মধ্যে দীর্ঘ তম কোন টি?
উত্তর - মেকং নদী

16. গঙ্গা নদী উৎসস্থল কোথায় অবস্থিত?
উত্তর - গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে

17. তিব্বতের মানস সরোবরের কাছ থেকে উৎপন্ন হয়ে এশিয়ার কোন দক্ষিণ বাহী নদীটি বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে?
উত্তর - ব্রহ্মপুত্র নদী

18. তিব্বতের মানস সরোবর থেকে এশিয়ার কোন কোন নদী উৎপন্ন হয়েছে?
উত্তর - সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র

19. টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মিলিত প্রবাহের নাম কি?
উত্তর - সাত ইল আরব

20. এশিয়ার দীর্ঘ তম নদীর নাম কি?
উত্তর - ইয়াংসি কিয়াং 

21. এশিয়া মহাদেশের কোন নদীকে  স্বর্ণ রেনুর নদী বলে?
উত্তর - ইয়াংসি কিয়াং

22. এশিয়ার কোন নদীকে পীত নদী বলে?
উত্তর - হোয়াংহো নদীকে

23. এশিয়ার পূর্ব বাহী দুটি নদীর নাম কর, যারা সিন সাগরে পতিত হয়েছে?
উত্তর - ইয়াংসি কিয়াং ও সি কিয়াং নদী

24. প্রতি হাজার মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে কত ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে উষ্ণতা কমে?
উত্তর - 6.4 ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে

25. এশিয়া মহাদেশের অন্তর্গত কোন কোন জলবায়ু অঞ্চলে নিরক্ষীয় জলবায়ু দেখা যায়?
উত্তর - নিরক্ষরেখা র উভয় দিকে 10 ডিগ্রি অক্ষাংশ এর মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত এশিয়া মহাদেশের ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশে নিরক্ষীয় জলবায়ু দেখা যায়।
26. কোন ধরনের জলবায়ু অঞ্চলে চিরহরিৎ বৃক্ষের অরণ্যে দেখা যায়?
উত্তর - নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে

27. এশিয়া মহাদেশের কোন কোন অঞ্চলে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু লক্ষ্য করা যায়?
উত্তর - ভূমধ্যসাগরে র তীরবর্তী এশিয়া মহাদেশের সিরিয়া, লেবানন, তুরস্ক, ইজরায়েল, জর্ডান এ ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু লক্ষ্য করা যায়।

28. পর্ণমোচী বৃক্ষের অরণ্য কোন ধরনের জলবায়ু অঞ্চলে দেখা যায়? 
উত্তর - মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলে

29. কোন ধরনের জলবায়ু অঞ্চলে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়?
উত্তর - ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে

30. এশিয়া মহাদেশের উত্তরাংশে কোন ধরনের জলবায়ু দেখা যায় ?
উত্তর - তুন্দ্রা জলবায়ু

31. এশিয়া মহাদেশের উষ্ণতম স্থান কোনটি?
উত্তর - এশিয়া মহাদেশের উষ্ণতম স্থান পাকিস্তানের জেকোবাবাদ। 

32. ইয়াংসি কিয়াং নদীর উচ্চ অববাহিকাটি কত দূর অবধি বিস্তৃত?
উত্তর - উৎস থেকে ইচাং পর্যন্ত ইয়াংসি কিয়াং নদীর উচ্চ অববাহিকাটি বিস্তৃত। 

33. ইয়াংসি কিয়াং নদীর উচ্চ অববাহিকাটি কি নামে পরিচিত? 
উত্তর - লাল রঙের বেলে পাথর দ্বারা গঠিত বলে ইয়াংসি কিয়াং নদীর উচ্চ অববাহিকাটি রেড বেসিন নামে পরিচিত।

32. চীনের ধানের গোলা কাকে বলে?
উত্তর - হুনান প্রদেশ কে

33. কোন অঞ্চলকে চীনের শস্য ভান্ডার বলা হয়?
উত্তর - ইচাং থেকে হুনান পর্যন্ত বিস্তৃত ইয়াংসি কিয়াং নদীর মধ্য অববাহিকা কে চীনের শস্য ভান্ডার বলা হয়।

34. চীনের হল্যান্ড বলা হয় কোন অঞ্চল কে ?
উত্তর - ইয়াংসি কিয়াং নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে ইউরোপের হল্যান্ডের মতো সমুদ্র থেকে ভূমি উদ্ধার করা হয় বলে এই অঞ্চল কে চীনের হল্যান্ড বলা হয়।

35.  কাকে চীনের ম্যাঞ্চেস্টার বলা হয়?
উত্তর - চীনের সাংহাই কে

36. টোকিও ইয়োকোহামা শিল্পাঞ্চল টি কোন দ্বীপের কোন সমভূমিতে অবস্থিত? 
উত্তর - জাপানের প্রধান চারটি দ্বীপের বৃহত্তম দ্বীপ হনসুর কান্ট সমভূমিতে অবস্থিত।

37. টোকিও ইয়োকোহামা শিল্পাঞ্চলের আরেক নাম কি? 
উত্তর - কিহিন শিল্পাঞ্চল

38. জাপানের রাজধানীর নাম কি?
উত্তর - টোকিও

39. জাপানের সর্ব বৃহৎ বন্দরের নাম কি?
উত্তর - ইয়োকোহামা

40. দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার প্রধান খনিজ তেল উত্তোলনকারী দেশ গুলির নাম উল্লেখ করো?
উত্তর - সৌদি আরব, ইরাক, ইরান, কুয়েত ও বাহরিন ইত্যাদি। 


▧ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর: প্রতিটা প্রশ্নের মান -2/3

1. এশিয়া মহাদেশের আয়তন ও সীমা বর্ণনা করো।

উঃ। পৃথিবীর স্থলভাগের তিন ভাগের এক ভাগ জুড়ে রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম ও জনবহুল মহাদেশ এশিয়া। এই মহাদেশের আয়তন 44,579,00 বর্গকিলোমিটার। এর পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগর, পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর, কাস্পিয়ান সাগর উত্তরে সুমেরু মহাসাগর ও দক্ষিণে ভারত মহাসাগর। এশিয়া এবং ইউরোপ দুটো মহাদেশ ইউরেশিয়া নামক অখন্ড স্থলভাগের অংশ। এশিয়া ও ইউরোপের মাঝে রয়েছে ইউরাল পর্বত ও ইউরাল নদী। লোহিত সাগর ও সুয়েজ খাল এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশকে আলাদা করেছে।


2. এশিয়া মহাদেশের অবস্থান বর্ণনা করো।

উঃ। ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশের পূর্বদিকে অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশ এশিয়া। এই মহাদেশটি নিরক্ষরেখার 126 দক্ষিণ অক্ষাংশ থেকে উত্তরে 77° 43 উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। এশিয়া মহাদেশ 160° 40 পশ্চিম পূর্ব দ্রাঘিমারেখা থেকে পূর্বে 169°40 পশ্চিম দ্রাঘিমা রেখার মধ্যে অবস্থিত। আন্তর্জাতিক তারিখরেখা এই মহাদেশের পূর্বে 170° পশ্চিম দ্রাঘিমা রেখার মধ্যে অবস্থিত। আন্তর্জাতিক তারিখরেখা এই মহাদেশের পূর্বপ্রান্ত থেকে উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত হয়েছে।


3. এশিয়া মহাদেশকে চরম বৈশিষ্ট্যের মহাদেশ' বলা হয় কেন?

উঃ। পৃথিবীর স্থলভাগের তিনভাগের একভাগ জুড়ে রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম ও জনবহুল মহাদেশ এশিয়া। ভাবলে অবাক হতে হয় চারটি ইউরোপ অথবা দেড়খানা আফ্রিকার সমান এই এশিয়া মহাদেশ এতই বিশাল যে এর পশ্চিম প্রান্তে যখন সূর্য ওঠে তখন পূর্বপ্রান্তে সূর্যাস্তের সময় হয়ে যায়। সুউচ্চ পর্বতশ্রেণি, বিরাট মালভূমি, বিস্তীর্ণ সমভূমি ও উর্বর নদী উপত্যকার মহাদেশ এশিয়ার যে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা অন্য কোনো মহাদেশে নেই। তাই এশিয়া মহাদেশকে চরম বৈশিষ্ট্যের মহাদেশ” বলা হয়।


4. এশিয়া মহাদেশ ‘সভ্যতার জন্মক্ষেত্র ও প্রাচ্য সংস্কৃতির ঐতিহ্য'—আলোচনা করো।

উঃ। এশিয়া মহাদেশ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শিল্প সংস্কৃতি, জনগোষ্ঠী ও জীবনযাত্রার বৈচিত্র্যে অনন্য। খ্রিস্টজন্মের 3500- 5000 বছর আগে এশিয়ার বড়ো বড়ো নদীগুলির উর্বর উপত্যকায় বেশ কয়েকটি নদীমাতৃক সভ্যতার জন্ম হয়েছিল। সিন্ধু নদের তীরে হরপ্পা, মহেঞ্জোদাড়ো ও সিন্ধু সভ্যতার বিকাশ হয়েছিল। তেমনই উন্নত মেসোপটেমিয়া ও সুমের সভ্যতা উদ্ভব হয়েছিল ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদীর তীরে। হোয়াংহো নদী উপত্যকা ছিল চিন। সভ্যতার আঁতুড়ঘর। অতীতকাল থেকে শুরু করে এশিয়া মহাদেশ তাই আজও প্রাচ্য সংস্কৃতির ধারক এবং ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ।



5. পামীর গ্রন্থি কথাটির তাৎপর্য কী? 

উঃ। পামীর হল পৃথিবীর সর্বোচ্চ মালভূমি। বিভিন্ন দিক থেকে অনেকগুলি ছাত্রবন্ধু সপ্তম শ্রের্ব তশ্রেণি এসে পামীর মালভূমিতে মিলিত হয়ে একটি গ্রন্থিতে পরিণত হয়েছে। তাই পামীর মালভূমিকে পামীর গ্রন্থি বলে।


6. পামীর মালভূমিকে পৃথিবীর ছাদ' বলা হয় কেন?

উঃ। পামীর মালভূমি ভারতের জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের উত্তর-পশ্চিম দিকে তাজাকিস্তান রাষ্ট্রে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ মালভূমি। এর উচ্চতা 4.873 মি। এই মালভূমিটি এত উঁচুতে অবস্থিত হওয়ায় মালভূমি অঞ্চলটি পৃথিবীর ছাদের মতো অবস্থান করছে বলে মনে হয়। তাই এই পামীর মালভূমিকে 'পৃথিবীর ছাদ' বলে।


7. এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ পূর্ব দিকের সমভূমি ও দ্বীপপুঞ্জগুলির বিবরণ দাও।

উঃ। এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ পূর্ব দিকে কতগুলি নদীর পলিদ্বারা কয়েকটি সমভূমি তৈরি হয়েছে এগুলি হল (i) উত্তর চিন সমভূমি। (ii) সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সমভূমি। (iii) মেসোপটেমিয়া সমভূমি। এশিয়ার দক্ষিণ পূর্ব দিকে প্রশান্ত মহাসাগরের উপর কতকগুলি দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে এগুলি হল (i) জাপানের দ্বীপ সমূহ। (ii) ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপসমূহ। (iii) কিউরাইল দ্বীপপুঞ্জ ও (iv) ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ


প্রতিটা প্রশ্নের মান -5/8

1. এশিয়া মহাদেশের প্রাকৃতিক পরিচয় দাও।

উঃ। এশিয়ার ভূপ্রাকৃতিক মানচিত্রটি দেখলে অবাক হতে হয়। পৃথিবীতে আর কোনো মহাদেশ নেই যার মাঝখানে এত পাহাড় পর্বতের সমাবেশ ঘটেছে। এশিয়া মহাদেশকে প্রাকৃতিক ভাবে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়, এগুলি হল (i) মধ্যভাগের পার্বত্য অঞ্চল। (ii) দক্ষিণের প্রাচীন মালভূমি অঞ্চল এবং (iii) উত্তরের বিশাল সমতলভূমি।

 (i) মধ্যভাগের পার্বত্য অঞ্চল : এই পার্বত্য অঞ্চলটি পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর থেকে পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। পামীর এবং আর্মেনীয়া এই দুটি পর্বতগ্রন্থি থেকে খুব উঁচু উঁচু পর্বতমালা নানা দিকে ছড়িয়ে গেছে। এগুলির গড় উচ্চতা 4000 মিটারেরও বেশি। 

(ii) দক্ষিণের প্রাচীন মালভূমি অঞ্চল : এশিয়া মহাদেশের মধ্যভাগের পার্বত্য অঞ্চলের দক্ষিণে বেশ কিছু প্রাচীন মালভূমি রয়েছে যেগুলি কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত। এখানকার নদীগুলির প্রবাহ দেখলে বোঝা যায় যে অঞ্চলটির ঢাল পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে। এর মধ্যে রয়েছে আরবের মালভূমি, দাক্ষিণাত্যের মালভূমি ও ইন্দোচিন মালভূমি ।

 (iii) উত্তরের বিশাল সমতল ভূমি : মধ্যভাগের পার্বত্য অঞ্চলের উত্তরে একটি বড়ো সমতলভূমি রয়েছে। এই সমভূমি পৃথিবীর বৃহত্তম সমভূমি। এই সমভূমির মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলির প্রবাহ দেখে বোঝা যায় এই অঞ্চলটি দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে ঢালু।


2. এশিয়া মহাদেশকে বৈচিত্র্যময় দেশ বলা হয় কেন ?

উঃ। আয়তন, প্রাকৃতিক পরিবেশ ইত্যাদি দিক দিয়ে এশিয়া এক বৈচিত্র্যময় মহাদেশ। 

(i) ভূ-তাত্ত্বিক বৈচিত্র্য : প্রাচীন ভূখণ্ড আঙ্গারাল্যান্ড ও গন্ডোয়ানাল্যান্ড যেমন আছে, তেমনি নবীন হিমালয় পর্বতের অবস্থানও এই মহাদেশে দেখা যায়।

(ii) ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য : এই মহাদেশে একদিকে পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট রয়েছে, অন্যদিকে পৃথিবীর নিম্নতম হ্রদ মরুসাগরও আছে। সামুদ্রিক অংশে পৃথিবীর নিম্নতম স্থান মারিয়ানা সমুদ্রখাত আছে।

(iii) নদ-নদী ও হ্রদের বৈচিত্র্য : বরফগলা জলে পুষ্ট দীর্ঘ নদীর মতো অতি ক্ষুদ্র নদীও এই মহাদেশে দেখতে পাওয়া যায়। স্বাদু জলের হ্রদ উলার যেমন আছে, তেমনই লবণাক্ত জলের হ্রদও আছে। 

(iv) জলবায়ুগত বৈচিত্র্য : পৃথিবীর শীতলতম স্থান ঐমিয়াকন ও অন্যতম শীতলতম স্থান ভারখয়ানস্ক যেমন আছে, তেমনই উন্নতম স্থান জেকোবাবাদ রয়েছে।

(v) স্বাভাবিক উদ্ভিদের বৈচিত্র্য : এই মহাদেশেই পৃথিবীর বৃহত্তম বনভূমি তৈগার সাথে উদ্ভিদশূন্য মরুপ্রান্তরও রয়েছে।

(vi) জনবসতি অঞ্চলের বৈচিত্র্য : পৃথিবীর সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, তেমনই সাইবেরিয়া জনশূন্য অঞ্চল। এছাড়া বিভিন্ন অধিবাসীদের ধর্মের, জীবনযাত্রা প্রণালীর মধ্যেও অনেক বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। তাই বিশাল এই এশিয়া মহাদেশকে বৈচিত্র্যময় দেশ বলা হয়।


3. এশিয়ার মধ্যভাগের পার্বত্য অঞ্চলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উঃ। এশিয়া মহাদেশের মধ্যভাগের এই পার্বত্য অঞ্চলকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়; যথা- (i) পামীর গ্রন্থি থেকে বিস্তৃত পর্বতসমূহ। (ii) পূর্ব-হিমালয়ের গ্রন্থি থেকে বিস্তৃত পর্বতসমূহ। (iii) পশ্চিমে আর্মেনীয় গ্রন্থি থেকে বিস্তৃত পর্বতসমূহ।

(i) পামীর গ্রন্থি থেকে বিস্তৃত পর্বতসমূহ : ভারতের জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের উত্তর-পশ্চিমদিকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ মালভূমি ‘পামীর' (উচ্চতা 4873 মিটার) অবস্থিত, একে পৃথিবীর ছাদ বলা হয়। এই অঞ্চলে এশিয়ার প্রধান প্রধান পর্বতগুলো মিলিত হওয়ায় এই অঞ্চলকে পামীর গ্রন্থিও বলা হয়। (a) পামীর গ্রন্থি থেকে দক্ষিণ-পূর্বদিকে বিস্তৃত হয়েছে কারাকোরাম পর্বতমালা, এই পর্বতের গডউইন অস্টিন বা K2 পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ। (b) পামীর গ্রন্থি থেকে দক্ষিণপূর্ব এবং পূর্বদিকে কারাকোরাম পর্বতের দক্ষিণ দিয়ে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতমালা হিমালয়। এই পর্বতের মাউন্ট এভারেস্ট পৃথিবীর সর্বোচ্চ গিরিশৃঙ্গ। এর উচ্চতা 8,848 মিটার বা 29,028 ফুট। (c) পামীর গ্রন্থির উত্তর- পূর্বদিকে কুয়েনলুন এবং আলতিনভাগ পর্বত অবস্থিত। কুয়েনলুন পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মার্কোপোলো। আলতিনতাগ পর্বতের উত্তর-পূর্বে থিংগান পর্বত এবং পূর্বদিকে নানসান ও সিনলিংসান পর্বত অবস্থিত। (d) পামীর গ্রন্থি থেকে তিয়েনসান, ইয়ারোনয়, আলতাই, খান গাই, সয়ান ও স্তানোভয় পর্বত এশিয়া মহাদেশের প্রায় উত্তর-পূর্ব সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত। আবার পামীর গ্রন্থি থেকে সুলেমান ও খিরথর পর্বত দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিন্দুকুশ পর্বত পশ্চিমদিকে অবস্থিত।

(ii) পূর্ব হিমালয়ের পর্বত গ্রন্থি থেকে বিস্তৃত পর্বতসমূহ : হিমালয় পর্বতের পূর্বদিকে অবস্থিত একটি ছোটো পর্বত গ্রন্থি থেকে, পাটকোই, নাগা, আরাকানয়োমা প্রভৃতি পর্বত দক্ষিণদিকে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এই পর্বতসমূহের একটি অংশ সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে পূর্বদিকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

(iii) পশ্চিমে আর্মেনীয় গ্রন্থি থেকে বিস্তৃত পর্বতসমূহ ঃ কৃয়সাগরের দক্ষিণদিকে অবস্থিত 'আর্মেনীয় মালভূমি তেও 'আর্মেনীয় গ্রন্থি' নামে একটি ছোটো পর্বতগ্ৰন্থি আছে, যা পামীর গ্রন্থির তুলনায় অপেক্ষাকৃত নীচু এবং ছোটো। এই পর্বতগ্রন্থির উত্তরে ককেশাস পর্বত, দক্ষিণ-পূর্বে জাগ্রোস পর্বত এবং পূর্বদিকে এলবুর্জ পর্বত অবস্থিত। পশ্চিমদিকে পন্টিক পর্বত ও তার দক্ষিণদিকে টরস পর্বত অবস্থিত। জাগ্রোস পর্বত দক্ষিণ-পূর্বদিকে গিয়ে খিরথর পর্বতের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এলবুর্জের পূর্বদিকে আছে কোহিবাবা পর্বত এবং তারও পূর্বদিকে হিন্দুকুশ পর্বত অবস্থিত।


4. এশিয়া মহাদেশের উত্তরের বিশাল সমতল ভূমির পরিচয় দাও।

উঃ। এশিয়ার উত্তরের এই সমভূমি পৃথিবীর বৃহত্তম সমভূমি সমতল ভূমিকে প্রাকৃতিক গঠন অনুযায়ী তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। (i) তুরানের নিম্নভূমি। (ii) সাইবেরিয়ার সমভূমি। (iii) পূর্বের উচ্চভূমি বা শিল্ড সমভূমি।

(i) তুরানের নিম্নভূমি : উত্তরের সমভূমির দক্ষিণ পশ্চিমে কাস্পিয়ান ও আরল সাগরের চারিদিকে অবস্থিত এই নিম্নভূমি তুরানের নিম্নভূমি নামে পরিচিত।

(ii) সাইবেরিয়ার সমভূমি : এশিয়ার উত্তরে ওব, ইনিসি ও লেনা নদীর পলিসঞ্চয় এবং হিমবাহের কাজের ফলে এই সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে। এই সমভূমিতে মাঝে মাঝে বন্যা দেখা যায়।

(iii) পূর্বের উচ্চভূমি বা শিল্ড সমভূমি ঃ এই সমভূমির উত্তর পূর্ব দিকে প্রাচীন মালভূমি ক্ষয়ে যাওয়ার ফলে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে তাকে পূর্বের উচ্চভূমি বা শিল্ড সমভূমি বলা হয়।













No comments:

Post a Comment